রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫,
১ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
অর্থ-বাণিজ্য
স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোদমে ঘুরে দাঁড়াবে: এমডি মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ
রমজান আলী
Publish: Sunday, 20 October, 2024, 6:34 PM  (ভিজিট : 228)

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিপিএলসি) দেশের শরিয়াহভিত্তিক একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৯৫ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি বা এসআইবিএলের যাত্রা শুরু হয়। ব্যাংকটির বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা, আগামীর পদক্ষেপ জানিয়েছেন আজকের দৈনিক-এর অর্থনৈতিক প্রতিবেদক রমজান আলীকে।

আজকের দৈনিক: বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ?
মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ: বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এরমধ্যে নগদ জমা বাড়ানোর পাশাপাশি  রিকভারি অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ন  ও খেলাপী বিনিয়োগ থেকে আদায় বাড়ানোর প্রতি বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাময়িকভাবে স্থগিত হওয়া বিভিন্ন বিল সংগ্রহের হিসাবগুলো, যেমন, ডেসকো, তিতাস, পল্লী বিদ্যুৎ, ওয়াসা, বিটিসিএল, বিআরটিএ, ডিপিডিসি, বাখরাবাদ, কর্ণফুলীসহ আরো বেশকিছুর প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে নগদ আয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যা আমাদের তারল্য সংকট কাটাতে সহায়তা করবে। 

এছাড়া আরো বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি যার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক পুরোদমে ঘুরে দাঁড়াবে ইন্নশাল্লাহ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে তারল্য সহায়তা পেয়ে গতি ফিরেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে। গ্রাহকদের পুরো টাকা না দিতে পারলেও বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটি এখন স্বল্প অঙ্কের চাহিদা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করতে পারছে। এরই মধ্যে সম্মানিত গ্রাহকদের বিভিন্ন হিসাবে  (এ/সিএস) নগদ গ্রহন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৭৯৪ কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ন এবং খেলাপি বিনিয়োগ আদায় করেছে এসআইবিএল। ব্যাংকটিতে সুশাসন ফিরাতে সকল ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সকল গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভালো ও মন্দ কাউকে বাদ দেয়া হচ্ছে না। ভালো ও মন্দ সবাই আমাদের গ্রাহক। সবাইকে বলছি নিয়মিত বিনিয়োগ পরিশোধ করতে। যারা নিয়মিত দেয় না, তারাও অনেকই আশ্বাস দিয়েছে বিনিয়োগ পরিশোধ করবে। তবে যারা টাকা দিবে না তাদের ব্যাপারেও আমরা কঠোর। তাদের ব্যাপারে সকল ধরণের আইনগত ব্যাবস্থা নিতেও আমরা পিছু হটবো না।  

আজকের দৈনিক: বর্তমান পর্ষদ কিভাবে সহযোগিতা করছে আপনাকে ?
মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ: বর্তমানে ব্যাংকের ভালো ও নির্ভরযোগ্য বোর্ড অফ ডিরেক্টরস রয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রশংসিত। বিজ্ঞ পর্ষদ তাঁদের সুচিন্তিত পলিসি ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছেন। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা  কর্তৃপক্ষের মধ্যে শতভাগ স্বচ্ছতা রয়েছে। এরকম বোর্ড আর্থিকখাতে সব জায়গায় দরকার। আমরা আশা করছি, সবাই মিলে শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরা একটি অন্যতম সেরা ব্যাংক হবো। একটি ভালো ব্যাংক তৈরি করতে যা যা পরিকল্পনা দরকার সব ধরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

আজকের দৈনিক: ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ: ব্যাংকটির আমানতের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়াতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বর্তমানে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ সাড়ে ৩২ হাজার ৭১৩ কোটি টাকার মতো।  যা বিগত দু'মাসে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বর্তমানে ফরেন ট্রেডের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমদানি রপ্তানি মিলে ১৬ হাজার কোটি টাকা মতো। এটা বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে। সবচেয়ে বেশি জোর দিবো মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে।

 এছাড়া আগের মতো গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নানাবিধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। তারল্য সংকট থাকলেও এই ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। রেমিট্যান্স গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর আগে যেসব রেমিট্যান্স গ্রাহক তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ আমাদের মাধ্যমে পাঠাতেন তাঁদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করছি, যাতে তাঁরা আগের মতোই  রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রাখেন। আমাদের পরিকল্পনা হলো ওভারডিও, ক্লাসিফায়েড ও অবলোপনকৃত বিনিয়োগ থেকে আদায়ের কার্যক্রমকে আরো জোরদার করা, চলমান মামলাগুলো গতিশীল করা, স্থগিত হয়ে থাকা মামলাগুলোকে পুনরায় সচল করা। এ ছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং ক্ষেত্রভেদে তাদের নামে নতুন মামলা দেওয়া।

আজকের দৈনিক: এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে ঋণের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিবেন?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ: আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতই শক্তিশালী ব্যক্তি হোক, ব্যাংকের টাকা ব্যাংককে, জনগণের টাকা জনগণকে ফেরত দিতে হবে। এই মোটিভ নিয়ে আমরা নেমেছি। এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে এসআইবিএল থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তার মধ্যে চলমান কিছু প্রকল্প থেকে টাকা আদায় সম্ভব এবং সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেষ্ট। এই গ্রুপের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার এমটিডিআর (মেয়াদি আমানত) হিসাব আমরা এর মধ্যেই যাচাইয়ের মাধ্যমে স্থগিত করে রেখেছি। এলসি খোলাসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের ওপর কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল, যা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে চলেছে। এসআইবিএল জন্মগতভাবে এস আলম গ্রুপভূক্ত ব্যাংক নয়। ২০১৭ সালে জোরপূর্বক ঐ গ্রুপ ব্যাংকি দখল করে নেয়। ফলে এস আলম গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত অন্য ব্যাংকগুলোর সাথে এসআইবিপিএলসিকে না মেলানোর জন্য সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইলো। আমরা বরং তুলনামূলক অনেক ভালো অবস্থানে আছি।

আজকের দৈনিক: বর্তমানে ব্যাংকে কী ধরণের সেবা দিচ্ছেন?

মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ: শরিয়াহ মোতাবেক সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছি। চালু রয়েছে ১৮০টি শাখা, ২৩৬টি উপশাখা, ৩৭৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং ও ২২৪টি এটিএম বুথ। চব্বিশ ঘণ্টা এটিএম সার্ভিস ও রিয়েল টাইম অন-লাইন ব্যাংকিং চালু রয়েছে। বৈদেশিক রেমিটেন্স সেবার জন্য বিশ্বের বিখ্যাত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রেমিট্যান্স কোম্পানীর সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে।  তাছাড়া আমাদের সকল শাখায় রয়েছে অন-লাইন ভিত্তিক ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করার সুবিধা। এসআইবিএলে অনেক ডিপোজিট প্রোডাক্ট ও ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্ট রয়েছে।  আমাদের কিছু একেবারেই ব্যতিক্রম এবং জনবান্ধব ডিপোজিট প্রডাক্ট রয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে ছাদ বাগানে আমরা বিনা জামানতে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ইনভেস্ট (ঋণ) প্রকল্প রয়েছে।

 এটার ভাল ফল পেয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের এই ছাদকৃষিকে কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমাদের আরেকটা প্রোডাক্ট আছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ক্রয়ে বিনিয়োগ বিষয়ে। সাধারণত ব্যাংকগুলো নতুন গাড়িতে ইনভেস্ট করে বা ঋণ দেয়। আমরা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ক্রয়ের জন্য ইনভেস্ট করে থাকি।এটাও সাধারণ মানুষের জন্য। আমাদের অবসরপ্রাপ্তদের জন্য একটা প্রোডাক্ট রয়েছে। অনেকে অবসরের পর সঠিক সঞ্চয় প্রকাল্প না জানার কারণে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে টাকা নষ্ট করে। আমরা তাদেরকে আমানত রাখার বিপরীতে মাসিক ভিত্তিতে লাভ বেশি দেওয়ার প্রস্তাব দেই।

 তাদেরকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি তার মধ্যে আছে, আমাদের ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ব্যাংকের এমপ্লয়িদের জন্য নির্ধারিত হারে ডিসকাউন্টে চিকিৎসা নিতে পারে। এমনকি আমরা তাদেরকে আমাদের নিজস্ব গাড়ি দিয়ে বিনা খরচে হাসপাতালে নেওয়া-আনা করবো। এটাতেও আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। ‘হকার, ড্রাইভারদের জন্যও আমরা প্রোডাক্ট নিয়ে এসেছি। ড্রাইভাররা যাতে  গাড়ির মালিক হতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমনেচ্ছু ছাত্রদের বিশেষ কর্জে-হাসানা প্রদান প্রকল্প আছে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উপকারী। এ ক্ষেত্রে আমরা একটা ন্যূনতম সার্ভিস চার্জ মাত্র নিয়ে থাকি।

আ. দৈ. /কাশেম/ রমজান
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতে ১৫০ পর্যটক নিয়ে ভেঙে পড়ল সেতু, স্রোতে ভেসে গেছেন অনেকে
ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২৪৯
ইসরাইলি আগ্রাসন প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় ও দক্ষিণখানের কাওলায় রাজউকের মোবাইল কোর্ট
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন: ইশরাক
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
‘আমার বুড়ো বাপকেও তুই ছাড়িসনি’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গণধোলাই
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
অর্থ-বাণিজ্য- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝