আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদানের কার্যক্রম বেশ জমে উঠেছে। তবে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন প্রদানে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি)’ ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) থেকে সাক্ষাৎকার শুরু হয়েছে।
এনসিপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর থেকেই বেশ সক্রিয় এবং চমক সৃস্টি করেছে।এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখর হয়ে ওঠে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায়। দলীয় নেতাদের পাশাপাশি শ্রমিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, আলেমসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফরম নিতে দেখা যায়।
দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফরম বিক্রি হয়েছে। এনসিপির নেতারা ছাড়াও জুলাই যোদ্ধা, সাবেক আমলা, অধ্যাপক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বলে জানান তারা। গতকাল মনোনয়ন ফরম কিনেছেন জুলাইয়ের আইকনিক স্যালুট হিরোখ্যাত সেই রিকশাচালক সুজন।
এনসিপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। বিশেষ করে একই আসনে একাধিক হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগে ডাকা হবে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই প্রথম ধাপে ১০০ থেকে ১৫০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কালবেলাকে বলেন, আমাদের মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় শেষ হয়েছে। আগ্রহভরে সবাই ফরম কিনেছেন।
আজ শুক্রবার থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে সাক্ষাৎকার শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, চলতি মাসেই প্রথম ধাপের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারব।
এত এত আগ্রহীদের মধ্য থেকে কীভাবে প্রার্থী বাছাই করা হবে—জানতে চাইলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, মানুষ আগ্রহভরে ফরম কিনেছেন। চিকিৎসক, শিক্ষক, আলেমসহ সব শ্রেণির মানুষ ফরম নিচ্ছেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি ডা. তাসনিম জারা বলেন, অনেক পেশার মানুষ যারা আগে রাজনীতিতে যুক্ত হবেন কিংবা জায়গা হবে চিন্তা করেননি তারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
অধ্যাপকরা আসছেন, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এসেছেন। তারা চাচ্ছেন, প্রক্রিয়াটাতে যুক্ত হতে। রিকশাচালক, শ্রমিক সব শ্রেণির মানুষকে আমরা যুক্ত করতে চাই। আশা করছি, সবাইকে নিয়ে সুন্দর একটা জায়গা তৈরি করতে পারব।
বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ এমন প্রার্থীদের জন্য এনসিপির দুয়ার খোলা রেখেছে। এরই মধ্যে এমন একাধিক ব্যক্তি এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেখানে অবশ্যই চমক থাকবে। বিএনপি এবং জামায়াতের মনোনয়ন বঞ্চিত যারা আমাদের সঙ্গে নির্বাচন করতে আগ্রহী, তাদেরও একটা অংশ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় থাকবেন।
এদিকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং মাজফুজ আলমের এনসিপিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আশা রাখছে দলটি। তবে, ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দল থেকে এ দুই উপদেষ্টা নির্বাচনে অংশ নিলে এনসিপি সেটা ইতিবাচকভাবে দেখবে—এমন কথাও জানান সারজিস আলম।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ ও দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন। দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা-১৮, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১, সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২, আব্দুল হান্নান মাসুদ নোয়াখালী-৬, আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ আসন থেকে লড়বেন।
ঢাকা-৮ থেকে অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম, ঢাকা-৯ থেকে লড়তে পারেন ডা. তাসনিম জারা। এ ছাড়া ঝালকাঠি-১ থেকে ডা. মাহমুদা মিতু, কক্সবাজার-২ আসন থেকে এ এস এম সুজা উদ্দিন, কুমিল্লা-১০ থেকে জয়নাল আবেদীন শিশির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ থেকে আতাউল্লাহ, গাজীপুর-৬ থেকে ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল, ময়মনসিংহ-৪ থেকে ডা. জাহেদুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-৯ থেকে আশেকীন আলম, সিরাজগঞ্জ-৬ থেকে এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম-৩ থেকে ডা. আতিক মুজাহিদ নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছেন।
আ. দৈ../কাশেম