এখনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদশে কৃষি কর্পোরেশানের (বিএডিসি) আমদানি করা কয়েক হাজার কোটি টাকার সার। গত ১৫ বছর যাবৎ কৃষি মন্ত্রণনালয় ও বিএডিসির কতিপয় কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে কয়েক আমদানি করা হাজার কোটি টাকার সার খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখায় পচেগলে ব্যবহারের অনপযোগি হয়ে পড়ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবৎ প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে বিদেশ থেকে অতিরিক্ত সার আমদানি করে অযত্নে ফেলে রেখে নষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, এবার এই নষ্ট সার ভালো সারের সাথে মিশিয়ে গ্রামের নিরীহ কৃষকদের কাছে বাজার দরে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখনো মুন্সিগঞ্জ জেলার মুক্তারপুর ঘাটে প্রায় ২-৩ লাখ বস্তা পঁচা-গলা সার পড়ে রয়েছে। দেশের বিভিন্নি এলাকার গুদাম রক্ষকদের সাথে রফা-দফা করে ওই সার বিএডিসিকে পাঠিয়ে দেওয়া প্রস্তুতি চলছে। এই সার গরিব কৃষকের কাছে বিক্রী করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তবে সার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে সরকারের শত শত কোটি টাকা রক্ষা করা যাবে এবং দেশের কৃষকরা ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবেন। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা নান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কয়েক শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের দপ্তরে আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) সার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএডিসির বৈসম্য ও দুর্নীতি বিরোধী কর্মচারীদের পক্ষ থেকে জনৈক মো: মোখলেছুর রহমানের স্বাক্ষরে আবেদন জানানো হয়েছে।
দায়ের করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন যাবৎ কৃষি মন্ত্রনালয়ের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি অব্যাহত থাাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের লোপাট হচ্ছে এবং সাধারণ কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সারা বছর খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েছে বিএডিসির আমদানিকৃত লক্ষ লক্ষ বস্তা নন-ইউরিয়া সার। আসন্ন বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে পচাঁসার শুকিয়ে ক্রসিং করে নতুন বস্তায় ভরে বিএডিসি গুদামে পাঠাচ্ছেন সংশ্লষ্টি পরবিহণ ঠিকাদাররা। তবে নষ্ট হওয়া সার কিনে প্রতারিত হবে প্রান্তিক কৃষকরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার ফলে দেশের গুরুত্ব্পূর্ণ কৃষি সেক্টও মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়রে অধিনস্থ দপ্তরগুলো কৃষকের স্বার্থ-রক্ষার পরিবর্তে নীরব র্দশকের ভূমকিায় আছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, যদিও বিএডিসির সিন্ডিকেটের যোগসাজসে কিছু অদক্ষ ঠিকাদার পরিবহণের কাজ নিয়ে আমদানি করা ঐ সার দীর্ঘদিন যাবৎ কালো বাজারে বিক্রি করে আসছে। ভুয়া বা জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে এনলিষ্টেড হওয়া বঙ্গ ট্রেডার্স ( যা তদন্তনাধীন এবং কখানো সরকারি সার বিএডিসি ও বিসিআইসিকে বুঝিয়ে দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে না) এতে করে সরকার বিপুল পরিমানে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বঙ্গ ট্রেডার্স নামে ঐ পরবিহণ ঠিকাদারের কাছে গত বছরের থাকা প্রায় ২০ লাখ বস্তা ডিএডিসির সার ভিজে নষ্ট হয়। ওই পঁচা সার রোদে শুকিয়ে ভালো সারের সাথে মিশিয়ে বিএডিসির গুদামে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, বিএডিসির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুলাহ সাজ্জাদ এনডিসি সব সময় নিয়োগ ও বদলি বানিজ্যে খুরধার ছিলেন। আর অপরিকল্পিত ভাবে সার ও বিজ আমদানি মজুত ও টেন্ডার পাইয়ে দিতে সিন্ডিকেটের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড ড. নুরুন নাহার চৌধুরী এনডিসি (অতিরিক্ত সচবি সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরন) এবং তার স্বামী সাবেক জনপ্রশাসন ও র্বতমানে সড়ক ও জনপথ মন্ত্রনালয়ে ডেপুটেশানে থাকা অতিরিক্ত সচিব জিয়াউল হক, যিনি ওপর মহল সামলাতেন।
তারা বিগত ১৫ বছর যাবৎ আওয়ামী সরকারের হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিএডিসিতে সিন্ডিকেট করে সার নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। আর একজন সিন্ডিকেটের সদস্য রেহানা ইয়াছমিন ( অতিরিক্ত সচিব ,প্রশাসন কৃষি মন্ত্রণালয়), তিনি ব্যবহার করেন তিনটি সরকারি গাড়ি নং:- ঢাকা মেট্রো ১৫- ৭৩৬৭ (পার্টনার প্রকল্প) এবং ডিএই’র দুইটি। তার ড্রাইভার নয়ন- ০১৭২৭৬৭৫৭৬৬, ড্রাইভার আতাউর- ০১৭৪৮৬৪২১২০, ড্রাইভার শ্যমল- ০১৭১২০০২১৮০ ।
এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ড. নুরুন নাহার চৌধুরী এনডিসি (সাবেক আমলা আবু আলম শহীদ খানের) পিএস ছিলেন। তিনি স্বাস্থে’র মিঠু চক্ররে সাথে মিলে গত ৪ আগস্ট শান্তি মিছিলের নামে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের লোক সাপ্লাইল দিয়েছিলেন। ধরা ছোয়ার বাইরে থাকা সিন্ডিকেটের আরেক জন কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্ল্যাহ মিয়ান। তার মদদেই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বেপরোয়া। ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্ল্যাহ মিয়ান কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্যাক্তিগত ভাবে ২০২৩ সাল থেকে গাজীপুরে গাছা ইউনিয়নের কামারজুড়িস্থ ৩৬ নং ওয়ার্ডে দৃষ্টিন্দন করে গড়ে তুলছেন রাহিমা-ফজল স্কুল এন্ড কলেজ। এতো টাকা তিনি পেলেন কোথায়।
দুদকের দায়ের করা অভিযোগ আরো বলা হয়েছে, সারা দেশের বিএডিসির গুদামগুলোর ধারণ ক্ষমতা ২ লাখ ৪০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন সারের। অথচ প্রতিবছর বিএডিসি আমদানী করে ২০ থেকে ২২ লক্ষ মেট্রিক টন সার। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত সার আমদানি করার কারণে সময় মতো সার পৌছে দিলেও গুদামে জায়গার অভাবে তারা পুরো সার বুঝে নিতে র্ব্যথ হয়।এখনো ২-৩ লাখ বস্তা পঁচা-গলা সার মুন্সিগঞ্জে মুক্তারপুর ঘাটে পড়ে রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকার গুদাম রক্ষকদের সাথে রফা-দফা করে ওই সার বিএডিসিকে বুঝিয়ে দেওয়া প্রচেষ্টা চলছে। এই সার গরিব কৃষকের কাছে বিক্রী করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অভিযুক্তক্ত ব্যক্তিগন ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারলে দেশের শত শত কোটি টাকা রক্ষাসহ দেশের কৃষক এবং কৃষিখাত ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেচে যাবে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোটালে বিএডিসির সার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সারা আমদানি ও রক্ষণা বেক্ষনের নামে নানা অনিয়ম.দুর্নীতি এবং সরকারের শত শত কোটি টাকার লোপাটের অভিযোগেবেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নিরবর্তার সুযোগে সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখানো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন।
আ. দৈ. /কাশেম