কোন ইক্ষু বা আখ নয়, ভারত থেকে অবৈধপথে আমদানি কৃত টিনের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য ঝোলা গুড় দিয়ে সিরাজগঞ্জে আবার পুনরায় দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরী হচ্ছে অরজিনাল গুড়। ভারত থেকে আমদানিকৃত টিনের মধ্যে ঝোলা গুড় মানুষতো দূরের কথা পশুপাখি, গবাদিপশু খাওয়ার উপযুক্ত না এমন ঝোলা গুড় দিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ছোনগাছা, খোকশাবাড়ি, বাগবাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট গড়ে উঠেছে গুড় তৈরীর কারখানা।
আর এই তৈরীকৃত গুড়ের ডিমা সিরাজগঞ্জ সহ জেলার আশপাশের জেলাতে বিক্রি হচ্ছে। এই গুড়ের ডিমা সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বগুড়া জেলার ধুনট, সারিয়াকান্দি, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলা, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলাতে ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়ে থাকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ঝোলা গুড় দিয়ে পুনরায় দেশীয় পদ্ধতিতে গুড় তৈরী করার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা, খোকশাবাড়ি, বাগিবাটি ইউনিয়নে একাধিক জায়গা গুড় তৈরীর কারখানায় দেখা মিলেছে। মাঝে মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন এই গুড় তৈরীর কারখানায় একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল জরিমানা করলে এই অবৈধ গুড় তৈরীর কারখানা বন্ধ হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ উপজেলার ছোনগাছা বাজারে ইমরান ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী হাজী আব্দুস সামাদ নামক এই ব্যবসায়ী চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার সোনামসিজদ স্থলবন্দর মেসার্স আল্লাহর দান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর ট্রাক চালান ব্যবহার করে ১৫৬০টি ঝোলা গুড়ের টিন ছোনাগাছা বাজারের গুদামজাতকরণ করছে। ট্রাক থেকে ২৫ কেজি ওজনের একটি ঝোলাগুড়ের ওজনের টিন হঠাৎ করে শ্রমিকের মাথা থেকে পড়ে গেলে টিন ফেটে ঝোলাগুড় বের মাটিতে পড়ে যায়। তখন দেখা যায়, এই ঝোলাগুড়ের মধ্যে থেকে ব্যাপকভাবে দুর্গন্ধ আসছে। মানুষতো দূরের কথা, এই ঝোলাগুড় গবাদি পশু, পশুপাখিও খাবে না।
১৫৬০টি ঝোলাগুড়ের টিন কি করবেন মর্মে, সিরাজগঞ্জ উপজেলার ছোনগাছা বাজারে ইমরান ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী হাজী আব্দুস সামাদ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরী, পোটল ছোনগাছা, ঘোড়াচড়া, চরখাতা, খোকশাবাড়ি ইউনিয়নে পারপাচিল, বাগবাটি ইউনিয়নে ইছামতি রাজীবপুরে গুড় তৈরীর কারখানার মালিকগণ এই ঝোলাগুড়ের টিন ক্রয় করে পুনরায় দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিমা গুড় তৈরী করে বিক্রি করে থাকে। এছাড়াও এই ঝোলাগুড়ের টিন বিভিন্ন মিষ্টান্ন দোকানদাররা ক্রয় করে নিয়ে বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন যেমন-মিষ্টি, খুড়মা, বন্দি, মিষ্টি ঝুড়ি তৈরী করেছে থাকে। আমি একটি ঝোলাগুড়ের টিন ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ১’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি। তবে অনেক কৃষক এই গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য এই ঝোলাগুড় আমার থেকে ক্রয় করে থাকে।
ছোনগাছা ইউনিয়নের পোটল ছোনগাছা গুড় তৈরী কারখানার মালিক বলেন, আমরা ছোনগাছা বাজার থেকে এই ঝোলা গুড় ক্রয় করে এনে এই ঝোলাগুড় দিয়ে এখানে আবার পুনরায় দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিমা গুড় তৈরী করি। এই ডিমাগুড় গুলো আমি জামালপুর জেলাতে বিক্রি করে থাকি। ঝোলা গুড় দিয়ে ডিমা গুড় তৈরী করে আমার কারখানায় আমি সহ আমার অধীনে ৬জন ব্যক্তি জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে এই কর্মকান্ড করতে গিয়ে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে অনেক টাকা জরিমানাও দিয়েছি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মনোয়ার হোসেন বলেন, ভারতের মেয়াদ উত্তীর্ণ পশু খাওয়ানো ঝোলা গুড় আমদানিকারক এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।
আ. দৈ. /কাশেম/আশরাফ