বছরের পর বছর ধরে রংপুর বিভাগের প্রতি যে নজিরবিহীন বৈষম্য হচ্ছে তা নিরসনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল রংপুর বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে পৃথক রংপুর কমিশন গঠন এবং দ্রুত তিস্তা জায়ান্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩ ঘটিকায় রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলনের উদ্যোগে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
অবহেলা ও উন্নয়নে রংপুর বিভাগে সৃষ্ট বহুমাত্রিক দারিদ্র এবং উচ্চ বেকারত্ব নিরসনে আলাদা শিল্পনীতি, ঋণনীতি, শ্রমনীতি, বিনিয়োগ পরিবেশ এবং বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিতে পৃথক রংপুর উন্নয়ন কমিশন গঠন এবং বন্যা-খরা ও নদী ভাঙনের টেকসই সমাধানে দ্রুত তিস্তা জায়ান্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকাস্থ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থী ও পেশাজীবি বক্তব্য রাখেন।
রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলনের প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পৌনে দুই কোটি মানুষ নিয়ে রংপুর বিভাগ গঠিত। অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদেশে কর্মী প্রেরণ এবং অন্যান্য খাতে বাজেট বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগের উন্নয়নে আলাদা কোন নীতি-কৌশল কিংবা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি।
আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব মেহেদী হাসান সুমন বলেন, বাজেট প্রণয়ন এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রে রংপুর বিভাগের মানুষের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়। এ বিভাগে বৃহৎ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান, বন্যা-খরা ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকল্প কিংবা বহুমুখী দারিদ্র্য বিমোচনে আলাদা কোন পদক্ষেপ আজও নেয়া হয়নি। এসব বঞ্চনা অবসানের জন্য রংপুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। জুলাই আন্দোলনের পর্বতসম গণ-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের যে প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে তাতে রংপুরের উন্নয়ন বৈষম্য নিরসনকে একটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, দেশের খাদ্য চাহিদার ৫০ শতাংশের যোগান আসে রংপুর বিভাগ থেকে। অথচ দেশের দরিদ্রতম ১০ জেলার ৫ টি রংপুর বিভাগের। অন্য তিনটি জেলাও দারিদ্র্য সূচকের তলানিতে বছরে দুবার বন্যা এবং শুষ্ক মৌসুমে খরায় এ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ফলে এ বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়ে চলেছে। অথচ দেশের অন্য প্রান্তের অর্থনৈতিক অবস্থা রংপুরের চেয়ে বহুগুণ উন্নত।
নারায়নগঞ্জের সাথে কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যের হারের পার্থক্য প্রায় ২৮ গুণ। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সাথে যুক্ত মো. রিসালাত বলেন, বিগত বাজেটগুলো বিশ্লেষণ করলে রংপুরের প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের একটি ধারাবাহিক চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এসব দূরীকরণ ও রংপুরের সার্বিক উন্নয়নে বৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্রকল্প এবং শিল্পায়ন প্রয়োজন।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও রংপুর কেন চরমতম বৈষম্যের শিকার এমন প্রশ্ন রেখে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রিপন আহমেদ বলেন, এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে রংপুরের মানুষকে সংগঠিতভাবে কাজ করতে হবে। সুষম বাজেট প্রণয়ন এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দেশের অর্থনীতির মূল স্রোতধারার সাথে একীভূত করতে সরকারকে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। বাজেট বৈষম্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বড় কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। এতে অবহেলার চিত্র স্পষ্ট এমনটি মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত।
রংপুরের উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে ভৌগোলিক অবস্থান বড় কোন প্রতিবন্ধকতা নয় বরং রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক অনীহার কারণে উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে রংপুর বিভাগে শিল্পায়ন, বৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়নি। এ থেকে মুক্তি পেতে সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি রংপুর বিভাগের মানুষকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করেন উপস্থিত বক্তারা।
রংপুর বিভাগের আটটি জেলার সচেতন মানুষ মাত্রই বিরাজমান উন্নয়ন বৈষম্য ও বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তারা আঞ্চলিক বৈষম্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি চায়। অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ এবং তিস্তা জায়ান্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
এছাড়াও এসব বঞ্চনা ও অবহেলা লাঘবে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও উপস্থিত পেশাজীবীবৃন্দ। রংপুর বিভাগের সঙ্গে সারাদেশের অঞ্চলগত উন্নয়ন বৈষম্য দূর করার জন্য সরকার, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থা ও উদ্যোক্তাসহ সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার বলে জোর আরোপ করেন সমাবেশে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা।
আ.দৈ/এআর