বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পরিচালনায় দেশের সব রাজনৈতিক দল মিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে এসেছে। তিনি বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। রাত ৮টা ২০ মিনিটে শুরু হওয়া ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচার হচ্ছে।
এর আগে বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা। অভ্যুত্থানের শরিক রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারকাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছি। এ কমিশনে ৩০টিরও অধিক রাজনৈতিক দল ও জোট স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রায় দুই মাস ধরে দলগত ও জোটগতভাবে আলোচনা করে। এ প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলো বাদ দিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয় চিহ্নিত করা হয়। তবে, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩ দিন ধরে আলোচনা শেষে ১৯টি বিষয়ের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে, যদিও কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই সনদ একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এটা শুধু রাজনৈতিক ইতিহাসে নয়, বৃহত্তর পরিমণ্ডলের রাজনৈতিক ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলিলতো স্মরণীয় হয়ে থাকবেই, এটা রচনার প্রক্রিয়াও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ দলিল প্রণয়নের আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের এবং ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের বিশেষ করে এ উদ্যোগের নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজকে জাতির পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা ছিল। আশা করছি, এ ঐকমত্যের ভিত্তিতে অচিরেই রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করবে এবং এর বাস্তবায়নেও ঐকমত্যে পৌঁছাবে।
জুলাই সনদ বাংলাদেশে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও সক্ষমতা, নাগরিক অধিকারের সত্যিকারের বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সামর্থ্যের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আ. দৈ./কাশেম