ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার উত্তর উত্তমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এক বিতর্কিত ব্যক্তি—যার বিরুদ্ধে ভুয়া সার্টিফিকেট দাখিলের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচনে (দ্বাদশ) সংসদ সদস্য হওয়া মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরের ঘনিষ্ঠ তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মো. আবুল বাশার নামের এক ব্যক্তি ইবাইস ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত একটি জাল সনদ জমা দিয়ে এডহক কমিটির সভাপতির পদ দখল করেছেন। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে—ইবাইস ইউনিভার্সিটির কোনো স্বীকৃতি নেই এবং তার সার্টিফিকেট বাতিলযোগ্য।
উত্তমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, সভাপতি পদের জন্য ডিগ্রি পাস বাধ্যতামূলক হলেও আবুল বাশার ভূয়া সনদ ব্যবহার করে পদটি দখল করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর স্কুল ও এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, আবুল বাশারের মালিকানাধীন মেগা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে রয়েছে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ, যা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র জানায়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা এক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই ট্রাভেল এজেন্সি যাত্রীর নাম ছাড়া গ্রুপ বুকিং করে টিকিট মজুদ রাখতো এবং পরে তা দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি করতো।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থে আবুল বাসার রাজধানী ঢাকায় জমি, ফ্ল্যাট ও বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন। সেই টাকাই তিনি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করেন এবং অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের সভাপতির পদও দখল করেন। স্থানীয় একজন অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন বিতর্কিত লোক কীভাবে সভাপতি হলো—তা খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা তার অপসারণ চাই।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘তার নিয়োগ স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশে হয়েছে। আমাদের একক ক্ষমতা নেই। যদি কিছু অসঙ্গতি থাকে, সেটা ইউএনও ও ডিসি মহোদয়ের দায়িত্ব।’ তবে আবুল বাশারের দাবি তার সার্টিফিকেট বৈধ। তিনি বলেন, তার ব্যাজের (সেশনের) অনেকে এই সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। একটা পক্ষ তাকে শত্রুতাবশত তার বিরুদ্ধে এসব করাচ্ছে।’
বিতর্কিত এমপি মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরের সঙ্গে আবুল বাশারের একাধিক ছবি এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। যার মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে, বিমানের পাশাপাশি সিটে বসে আবুল বাশার ও শাহজাহান ওমর বসে আছেন। অন্য আরেক ছবিতে দেখা গেছে, এমপি নির্বাচিত হবার পর শাহজাহান ওমরকে স্বর্ণের নৌকা উপহার দিচ্ছেন আবুল বাশার। বাকি একাধিক ছবিতে দেখা যাচ্ছে— শাহজাহান ওমরের নির্বাচনী পোস্টার শেয়ার করে লিখেছেন ‘জয় বাংলা’।
এসব ছবির বিষয়ে আবুল বাশার দাবি করেন, ‘তিনি একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। শাহজাহান ওমরও একসময় বিএনপি করতেন; একারণে তার প্রতি ভালোবাসা রয়েছে। আর একটি সমস্যার কারণে তিনি শাহজাহান ওমরের সঙ্গে যোগযোগ রাখতেন।’ তবে আওয়ামী লীগের সবাই খারাপ না দাবি তার।
স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি ঘরানার একজন সাবেক ছাত্রদল কর্মী কীভাবে আওয়ামী লীগের এমপির এত ঘনিষ্ঠ হন? এটিই প্রমাণ করে, সভাপতি হওয়ার পেছনে বড় ধরনের রাজনৈতিক লেনদেন ও সমঝোতা রয়েছে।