কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের চালানো গুলিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। সোমবার গণতন্ত্রপন্থি ‘সাবা সাবা’ অন্দোলনের ৩৫তম বার্ষিকীতে বিক্ষোভে নামে জনগণ। দেশজুড়ে হওয়া বিক্ষোভে এই রক্তপাত হয়।
গত মাসে ব্লগার আলবার্ট ওজোয়াং পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়ার পর বিক্ষোভ নতুন করে তীব্রতা পায়।রয়টার্সের একজন সাংবাদিক রাজধানী নাইরোবির কাংগেমি শহরতলিতে পুলিশকে গুলি চালাতে দেখেন। পরে গুলিতে এক ব্যক্তিকে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় একটি হাসপাতাল জানিয়েছে, সেখানে ছয়জন আহত অবস্থায় ভর্তি হন, যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। কেনিয়াট্টা ন্যাশনাল হাসপাতাল জানিয়েছে, ২৪ জন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কেনিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভে ১১ জন নিহত এবং ৫২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে কার গুলিতে প্রাণহানি হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি।
পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিকভাবে প্রাণহানি, আহত, যানবাহনের ক্ষতি এবং লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।’২০২৪ সালের জুন থেকে কেনিয়ায় কর বৃদ্ধি নিয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন দুর্নীতি, পুলিশি নির্যাতন এবং সরকারবিরোধীদের গুম হওয়া নিয়েও বিস্তৃত হয়েছে।
সোমবার কাংগেমি থেকে মূল শহরের দিকে এগোনো শত শত বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। পরে আবারও বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে, রয়টার্সের এক সাংবাদিক পুলিশের গুলিবর্ষণের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।
কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (কেএনসিএইচআর) জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলে বেশ কিছু মুখোশধারী, নির্ধারিত পোশাকবিহীন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করেছে, যারা পুলিশের চিহ্নবিহীন গাড়িতে চলাফেরা করছিল।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী, পুলিশকে সহজে শনাক্তযোগ্য পোশাকে থাকতে হয়, বিশেষ করে গত বছরের বিক্ষোভে সাদা পোশাকের পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগের পর।
কেএনসিএইচআর জানায়, রাজধানী নাইরোবি ও রিফট ভ্যালির এলডোরেট শহরে পুলিশের পাশাপাশি চাবুক ও ছুরি নিয়ে সশস্ত্র গ্যাং সদস্যদের দেখা গেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নাইয়েরি, এমবু ও নাকুরুতেও বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে পুলিশ ঘোড়ায় চড়ে পাথর ছোড়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
নাইরোবিতে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলো পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে এবং শহরের ভেতরেও যান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ফলে রাস্তাগুলো প্রায় ফাঁকা ছিল; কেবল পায়ে হেঁটে আসা বিক্ষোভকারীদের দেখা যায়। বেশিরভাগ স্কুল এবং অন্তত একটি শপিং মল বন্ধ রাখা হয়।
ওদিকে, কেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিপচুম্বা মুরকমেন এই বিক্ষোভকে ‘বিরোধিতার মুখোশে সন্ত্রাস’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, সরকার জান-মাল রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে, যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না হয়। পাশাপাশি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বা সন্ত্রাস মোকাবেলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে।’