সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এবার তার ভাগনি এবং যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত জোরদার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে কর অঞ্চল-৬ এর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তার গত ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ করেছে দুদক।
দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে ২০০৬-২০০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত টিউলিপের সকল আয়কর রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। বিষয়টি বুধবার (৪ জুন) দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জব্দ করা নথিপত্রে উল্লেখযোগ্য একটি দলিল হলো- ২০১৫-২০১৬ করবর্ষে রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং-B/201, প্লট নং-NE(A)-11B) তার ছোট বোনের নামে হেবা দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করার নথিও রয়েছে। তবে, তিনি ২০১৮-২০১৯ করবর্ষের পর থেকে আর কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বলে জানা গেছে।
এর আগে, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগের মামলার তদন্তে আসামি হিসাবে বক্তব্য দেওয়ার জন্য গত ১৪ মে টিউলিপ সিদ্দিককে তলব করেছিল দুদক।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৬৩ সালে তৎকালীন বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরী গুলশানে ১ বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পান। সরকারি ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, ৯৯ বছরের মধ্যে ওই প্লট হস্তান্তর বা ভাগ করে বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। তবে ১৯৭৩ সালে তিনি মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া নামে এক জনের কাছে আমমোক্তার মাধ্যমে প্লটটি হস্তান্তর করেন। এরপর প্লটটি ভাগ হয়ে বিক্রি হয় এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ শুরু হলে মামলা হয়। মামলার চলমান অবস্থায় এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় রাজউকের সংশ্লিষ্ট আইন উপদেষ্টারা ইস্টার্ন হাউজিংকে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অনুমোদন দেন, যা অবৈধ ছিল। কারণ, কোম্পানিটি লিজ হোল্ডার বা বৈধ প্রতিনিধি ছিল না।
রাজউকের রেকর্ড অনুযায়ী, ৯৯ বছরের ইজারার শর্তে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে প্লট হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। তবুও ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার করে ওই প্লট ভাগ করে ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ‘অবৈধভাবে’ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিকী অবৈধ পারিতোষিক হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন। এজাহারে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার অনুমোদনপূর্বক ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের অনুমোদন করিয়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে ও নিজে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দাবি করা হয়।
এদিকে দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব ৭ সদস্যদের টিম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা পরিবারের বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে, পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির এক মামলায়ও টিউলিপকে আসামি করেছে দুদক। ওই মামলায় সহযোগী আসামি হিসেবে গত ১৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত।