সিলেটে গত শনিবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল রোববার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে টানা দুদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম ও দুই পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের।
জানা যায়, ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য এবং সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা ভারী বর্ষণে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি দুই উপজেলা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
গতকাল রোববার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত মোট ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ। এরপর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আরও ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় সুরমা নদীর পানি সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচে।
একই সময়ে কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা ছিল বিপদসীমার ১৮৭ সেন্টিমিটার নিচে।
এছাড়া সুরমা নদীর পানি নগরীর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচে, কুশিয়ারা নদী বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, শাহজালাল উপশহর, মেজরটিলা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরেও তিন ঘণ্টায় ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পর নগরীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
এদিকে অতিবৃষ্টি ও সুরমা-কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধিতে কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা আছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ফলে গত তিন দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে এখানে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই বৃষ্টি আগামী আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট ও মীরসরাই পৌরসভা, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বহু গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। রান্না করতে পারছেন না অনেক পরিবার। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে গ্রামীণ সড়ক। মীরসরাই পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, দুদিন ধরে বর্ষণে পুরো এলাকা পানির নিচে। ঘরের ভেতর পানি ঢুকে গেছে। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারেননি তারা।