জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক করিডোরের সম্ভাবনা ও কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরতে সম্প্রতি একটি অর্থনৈতিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) এবং দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), জেট্রো এবং জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি অংশ নেন উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা।
বিশ্ববাণিজ্যে পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও সম্ভাবনা নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনা উঠে আসে সংস্কার, বিনিয়োগ পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। দুই দেশের নেতারা একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা শেয়ার করেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৩০০-র বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যা এই অংশীদারিত্বকে আরও বিস্তৃত ও টেকসই করার সুযোগ তৈরি করছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অবিচল বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে জাপান। আমাদের অংশীদারিত্ব কেবল নীতিনির্ভর নয়, এটি গভীর মানবিক বন্ধনের উপর প্রতিষ্ঠিত। দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোতে এখন ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। আর সামগ্রিক পরিস্থিতিও আগের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল। প্রয়োজনীয় সংস্কার আর সম্মিলিত উদ্যোগ থাকলে, বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে রূপ নিতে পারে।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জাপানের সিইও ইউসুকে আসাই বলেন, “বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পরিবর্তন হলেও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক করিডরের প্রতি অঙ্গীকার এবং দুই দেশের নিঃশর্ত বন্ধুত্ব এখনো অটুট আছে। জাপান বিশ্বের অন্যতম গ্লোবালাইজড ইকোনমি। আমাদের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যে ৩০০টিরও বেশি জাপানি কোম্পানি এখানে কাজ করছে। এখন বিনিয়োগ বাড়িয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদের অবদান বাড়ানোর সময়।”
বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “আমরা বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো বুঝি এবং তা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। স্বচ্ছতা ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়ীদের সক্রিয় ভূমিকা ও পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য একটি স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। যেটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে।”
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি বলেন, “কৌশলগত অংশীদার হিসেবে জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলমান ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টের (ইপিএ) আলোচনায় আমাদের যৌথ লক্ষ্যগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। এতে কৃষি, মাছ চাষ, অটোমোবাইল ও টেক্সটাইল খাতে বড় ধরনের সম্ভাবনার দিকগুলোও উঠে আসছে।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি চিফ রিস্ক অফিসার এনামুল হক বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হওয়া এবং রপ্তানিতে ধারাবাহিক উন্নতি হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারী বিশেষ করে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক ও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবেই থাকছে বাংলাদেশ। দেশের অন্যতম বিদেশি ব্যাঙ্ক এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে ব্যাংকটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।”
জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো বলেন, “বাংলাদেশ এখন এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ গন্তব্য। ব্যবসা সম্প্রসারণের সম্ভাবনার দিক থেকে ভারতের পরেই এ অঞ্চলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে কার্যরত জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো এখানকার বাজারে তাদের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটি বাংলাদেশের প্রতি জাপানের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।”
বাংলাদেশে জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদ বলেন, “গত কয়েক বছরে কিছু অগ্রগতি হলেও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। জাইকা, জেট্রো এবং অন্য সহযোগীরা যৌথভাবে বাংলাদেশে একাধিক কৌশলগত উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে। যার মধ্যে রয়েছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও এমআরটির মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প, বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্যোগ ইত্যাদি।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নানা দিক এবং জাপানের সঙ্গে যৌথভাবে টেকসই উন্নয়ন প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তারা বলেন, দু’দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্ব এবং একটি দৃঢ় ভবিষ্যৎ গঠনের প্রতি সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা বলেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দীর্ঘদিনের অংশীদার। জাপানি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে ব্যাংকটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
র/আ