ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ইতিহাসে নজিরবীহ প্রতারক, মিথ্যাবাদী, অসৎ, প্রতিষ্ঠানের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকারক, ভয়াবহ দুর্নীতিবাজ এবং রাষ্ট্রের আইন ও বিধিমালা অমান্য করে ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ তছনছকারী ও অযোগ্য প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই।
তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিএনসিসিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন এবং বারটা বাজিয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের রেখে যাওয়া কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ইতোমধ্যে সেবামূলক ও লাভজনক ডিএনসিসিকে দেউলিয়ামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, তিনি সরকারের আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘণ করে একের পর অবৈধ আদেশ জারির মাধ্যমে ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগকে তছনছ করেছেন। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করেছেন। গাবতলী পশুর হাটের ইজারায় ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকার স্থলে ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সবোর্চ্চ দরদাতাকে না দিয়ে খাস খালেকশনের নামে লুটপাটের ফন্দি করেছেন তিনি। এই বিষয়ে দুদকেরে অভিযানের পরও তার অপকর্ম থেমেনেই।
প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে, তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের এই সময় বিকেল ৩ টা থেকে পৌর কর মেলা আয়োজনের নামে তামাশা শুরু করেছেন। তার পক্ষ থেকে সারাদিনের অফিসিয়াল ভাবে রাজস্ব আদায়কে মেলার আদায় হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই মেলার নামে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে ।
সূত্র মতে, গোপন আতাতের মাধ্যমে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিশেষ মহলকে অবৈধভাবে অতিমাত্রায় সুবিধা দেওয়ার জন্য একযোগে ডিএনসিসির নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে সরকারের বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘ্ণ করেছেন। আইনে উল্লেখ আছে, বাণিজ্যিক ভবনে বার্ষিক আয়ের ২৩ শতাংশ এবং আবাসিক ভবনে ১২ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করতে হবে। এই আইন ও বিধি মালায় ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। নতুন ১৮টি ওয়ার্ডেও এই আইনেই গত ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য ও আদায় করা হচ্ছ।
কিন্ত প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ হুট করে আদেশ জারি করেছেন ,নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সব ভবনেই বার্ষিক আয়ের ওপর মাত্র ৭ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করতে হবে। শুধু তাই নয়, গত ২০১৮ সাল থেকেই বার্ষিক আয়ের ওপর মাত্র ৭ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করতে হবে। এছাড়া আরো বেশ কিছু আজব আদেশ ও নির্দেশনা জারি করেছেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে তিনি ডিএনসিসির কি পরিমান ক্ষতি করেছেন। এসব ক্ষতি সহসায় পুরন করার মতো নয়।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের অপসারণঃ
এদিকে গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা র নেতারা ডিএনসিসির স্বার্থে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের অপসারণ এবং তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনের সামনে ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান। তিনি একই সঙ্গে আগামী শনিবার (২৪ মে) প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ।
বিক্ষোভ মিছিল সঞ্চালনা করেন গণঅধিকার পরিষদ মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, রবিউল হাসান, কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম রতন, মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ খান বাপ্পী, মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি আবির ইসলাম সবুজ প্রমুখ।
ফারুক হাসান।গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদের যেমন জায়গা হয়নি, তেমনি জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষ ও কোনো রাজনৈতিক দলের কথা না শুনে শুধু একটি দলের কথা শুনে দেশ পরিচালনা করছে। তারা দেশকে এনজিও প্রজাতন্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। সরকার নির্বাচন বাদ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দিচ্ছে বলেও সমাবেশে অভিযোগ তোলা হয়।
সমাবেশে ফারুক হাসান বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিএনসিসি প্রশাসক এজাজ নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। শুধু নেতা বললে ভুল হবে, প্রথম সারির নেতা ছিলেন। হিযবুত তাহরীর করার কারণে একাধিকবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশ করে কারাগার থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ করেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে এজাজ সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর আন্দোলন-সংগ্রাম শুরুর পর খোলস পাল্টে এ সরকারের নব্যবিপ্লবী বনে যান। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে তলে তলে গোপন চুক্তি করে এই এজাজ আজকে সিটি করপোরেশনের ‘জমিদার’। বৃহস্পতিবার (২২ মে) পর্যন্ত এ সরকার তথা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আলটিমেটাম দিচ্ছি। এর মধ্যে এজাজকে অপসারণ করে গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী শনিবার আমাদের কর্মসূচি হবে যমুনার সামনে।
সংগঠনটির উচ্চ পরিষদ সদস্য আবু হানিফ বলেন, প্রশাসক এজাজকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার করতে হবে। তাকে যারা নিয়োগ দিয়েছে তারা কত টাকার বিনিময়ে, কোথায় কীভাবে লেনদেন হয়েছে এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষের রক্তে অর্জিত জুলাই বিপ্লবকে বিক্রি করে দিচ্ছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী সমন্বয়ক নামধারীরা। গাবতলীর পশুর হাটের সর্বোচ্চ ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকার দরদাতাকে ইজারা দেয়নি প্রশাসক এজাজ। ঢাকায় এনসিপি নামের নতুন রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মী তৈরির জন্য এজাজ সাহেব নিজেই এই খাস কালেকশনের দায়িত্ব নিয়েছেন। যেন এনসিপির দিকে মানুষ ধাবিত হয় সেই কাজ করছেন তিনি। কারণ ঢাকা থেকে এনসিপির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন করবে।’
প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের মিথ্যেচারঃ
এদিকে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত করার অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ডিএনসিসি। গত ১৮ মে এক বিবৃতিতে ডিএনসিসির মুখপাত্র ও তথ্য কর্মকর্তা ফারজানা ববি ডিএনসিসির ফেসবুক পেজের এক পোস্টে বিষয়টি উল্লেখ করেন। পরে ডিএনসিসির সেই পোস্টটি আবার প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ তার ভেরিফায়েড পেজেও শেয়ার করেন।
ডিএনসিসির সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, এই অভিযোগগুলো মূলত তাদের কাছ থেকে এসেছে, যারা পূর্ববর্তী সময়গুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, পরিবেশের ক্ষতি ও স্বৈরাচারী আচরণের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং যাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ এজাজ ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার থেকেছেন।
সেখানে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ এজাজ একজন দীর্ঘদিনের পরিবেশকর্মী, লেখক ও চিন্তাবিদ। তিনি প্রায় ১৬ বছর ধরে নদী রক্ষা, জলাধার সংরক্ষণ এবং পানির ন্যায্য বণ্টন নিয়ে কাজ করে আসছেন। তিনি জল-সংকট, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ও পানির ওপর নির্ভরশীল মানুষের অধিকার নিয়ে অবস্থান করে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত করেছেন। ফলে পরিকল্পিতভাবে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে একটি চক্র।
আ. দৈ./ কাশেম