আগামী সোমবার (১২ মে) ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গতবছর ২০২৪ সালে রাজধানীসহ সারাদেশে ‘জুলাই-আগস্টের’ গণহত্যার সুনিদিষ্ট ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার বিষয়টি জানিয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আজ শুক্রবার (৯ মে) দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, এই তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পরই শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে বর্তমান অন্তবৃর্তীকালীন সরকার ‘জুলাই-আগস্টের’ গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের মানবতা বিরোধী অপরাধ,গণহত্যা, অসংখ্য নাগরিকদের অপহরণ ,গুম, হত্যা, আয়নাঘরে নির্যাতনসহ বেশ কিছু সুনিদিষ্ট অভিযোগে ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পৃথক আরো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে।
বর্তমানে দুইটি ট্রাইব্যুনালেই পতীত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সাবেক মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, সরকারের আমলা, সরকারি চাকরি জীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত এবং সুনিদিষ্ট মামলায় অভিযুক্তদের বিচার করা হবে।
তবে ইতোমধ্যে যে সবর অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং আরো যারা গ্রেপ্তর হবেন, কেবলমাত্র তারাই ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রমে নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন। কিন্তু পলাতক আসামিরা কোনভাবেই নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন না। অতএব ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমে ডিফেন্স দিতে হলে, অবশ্যই অভিযুক্ত আসামিদেরকে আদালতে হাজির হতে হবে।
তবে এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র/ সরকার ইচ্ছা করলে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রমে শুনানিতে পৃথক আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন। অতীতে পলাতক আসামিদের পক্ষে ডিফেনস্ দিতে রাষ্ট্র/ সরকার উদ্যোগী হয়ে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার নজির রয়েছে।
এদিকে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রির্পোট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অর্থাৎ ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ঐ হত্যাকাণ্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই- আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আ. দৈ./ কাশেম