২০০৪ সালের বহুল আলোচিত আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। টঙ্গী প্রেস ক্লাব আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা দাবি করেন, এ হত্যাকাণ্ড ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল, যা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষকে নির্মূলের হাতিয়ার হিসেবে মামলাটিকে ব্যবহার করেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) টঙ্গী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলহাজ মেরাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সহসভাপতি শেখ আজিজুল হকের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার।
তিনি বলেন, “সূর্য যেমন পূর্ব আকাশে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়—তেমনি সত্য এই যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম সরকার আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত নন।”আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন মামলায় ১২ বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু। তিনি বলেন, “শোনাকথার ভিত্তিতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে—এটি ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই বিচার প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, মামলার বাদি ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই মতিউর রহমান মতি হত্যাকাণ্ডের আগে টঙ্গীর একটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়াটিয়া ছিলেন, কিন্তু পরে তিনি সেই জমি দখল করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন এবং মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমও গড়েছেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন অবিভক্ত টঙ্গী থানা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী।
মামলার প্রেক্ষাপট: ২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গীর নোয়াগাঁও হাইস্কুল মাঠে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক সম্মেলনে আহসান উল্লাহ মাস্টার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ঘটনার পরদিন তার ছোট ভাই মতিউর রহমান মতি বাদি হয়ে টঙ্গী থানায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
বক্তারা এই মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রভাবিত দাবি করে বলেন, “এটি ছিল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ, অথচ বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের টার্গেট করে সাজানো হয়েছে।”বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে বলা হয়, “সত্যের মুখোশ একদিন খুলবেই, তাই এ মামলার পূর্ণাঙ্গ পুনর্বিচার এবং নিরপরাধদের মুক্তির মাধ্যমে বিচার বিভাগের মর্যাদা পুনঃস্থাপন জরুরি।”
আ.দৈ./ কাশেম