এস আলম গ্রুপ ও তাদের সহযোগীর সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তার তিনদিন পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। এরপর ১০ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে নতুন পর্ষদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান এই পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির ।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি টাকা সহয়তা পেলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোদমে ঘুরে দাঁড়াবে ইউনিয়ন ব্যাংক। সেই লক্ষে বর্তমান পর্ষদ কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের টাকা জনগণকে ফেরত দিতে হবে। এই মোটিভ নিয়ে আমরা নেমেছি। এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তার মধ্যে চলমান কিছু প্রকল্প থেকে টাকা আদায় সম্ভব এবং সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেষ্ট। আমানত রাড়ানোর পাশাপাশি ঋণ আদায়ে বেশি জোর দিচ্ছি। আমানতকারীর টাকার সুরক্ষা, সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ ব্যাংকের স্থিতিশীলতা আনা ও আইনের সুশাসন এবং ব্যাংকিং সেক্টরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।
গত ২৫ আগস্ট ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মু. ফরীদ উদ্দীন আহমদ। এরআগে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে এ ব্যাংকের ভালো ও নির্ভরযোগ্য বোর্ড অব ডিরেক্টরস প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রশংসিত। বিজ্ঞ পর্ষদ তাদের সুচিন্তিত পলিসি ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে শতভাগ স্বচ্ছতা রয়েছে। এ রকম বোর্ড আর্থিক খাতে সব জায়গায় দরকার। একটি ভালো ব্যাংক তৈরি করতে যা যা পরিকল্পনা দরকার সব ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ব্যাংকটিতে সুশাসন ফেরাতে সকল ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সকল গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভালো ও মন্দ কাউকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। ভালো ও মন্দ সবাই আমাদের গ্রাহক। সবাইকে বলছি নিয়মিত বিনিয়োগ পরিশোধ করতে। যারা নিয়মিত দেয় না, তাদের অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন বিনিয়োগ পরিশোধ করবে। তবে যারা টাকা দেবে না তাদের ব্যাপারে আমরা কঠোর। তাদের ব্যাপারে সকল ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নিতেও আমরা পিছু হটব না।
বাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, নগদ জমা বাড়ানোর পাশাপাশি রিকভারি অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি বিনিয়োগ থেকে আদায় বাড়ানোর প্রতি বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া আগের মতো গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নানাবিধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। তারল্য সংকট থাকলেও এই ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। রেমিট্যান্স গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শরিয়াহ মোতাবেক সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছি। ২৪ ঘণ্টা এটিএম সার্ভিস ও রিয়েল টাইম অন-লাইন ব্যাংকিং চালু রয়েছে। ব্যাংকের ১৭৪ টি শাখা ও উপশাখা প্রধান কার্যালয়ের সহযোগিতা ছাড়াই দৈনন্দিন লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছে। সন্তুষ্টির বিষয় হল- সম্মানিত গ্রাহকদের পদাচারণায় ইউনিয়ন ব্যাংকের শাখা ও উপশাখাসমূহে পূর্বের ন্যায় কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে।
র/আ