বাঁশ পার্বত্যাঞ্চলে শিল্প কর্মের একটি অন্যতম মাধ্যম। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা একটা সময় পাহাড়ে আবাদ হওয়া বাঁশ দিয়ে চালাতো তাদের জীবন-জীবিকা। জঙ্গলের বাঁশ সংগ্রহ করে তৈরি করতো তাদের বসত ঘরসহ নিত্যপণ্যে রাখার নানা রকম ঝুঁড়ি। তবে এখন দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। আধুনিকতার ছোয়ায় বদলে গেছে বাঁশের শিল্প কর্ম। তবে নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো কেউ কেউ ঘরে বসে ধরে রেখেছে বাঁশের শিল্পকর্ম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এ তিন জেলায় রয়েছে ১০টি ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। তাদের ভাষা আর পোশাকে যেমন ভিন্নতা রয়েছে ঠিক তেমনি ভিন্নতা রয়েছে কাজে ও কর্মে। তবে বসত ঘরে রয়েছে একই বৈচিত্র্যতা। অর্থাৎ বাশেঁর তৈরি মাচাং ঘরে থাকতে পছন্দ করেন প্রায় সব নৃ-গোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, বাঁশ দিয়ে তৈরি করা ভিন্ন পণ্য সামগ্রী তাদের ব্যবহারের প্রধান কেন্দ্র বিন্দু। বিশেষ করে বাঁশের ঝুড়ি, চায়ের কাপ, ট্রে, গ্লাস, মুখোশ, ফটোফ্রেম, চুড়ির আলনা, খাবারের বাটি, ল্যাম্পশেড, কলমদানি, ফুলের টব, হুঁকা ইত্যাদি।
রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার বারুদগোলা গ্রামের বাসিন্দা হরন চাকমা বলেন, বাঁশ বা বেতের তৈরি সামগ্রী এক প্রাচীন শিল্প, লোক ঐতিহ্য। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ-বেত শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে পাহাড়ের জুম চাষিদের প্রধান উপকরণ হিসেবে এখনও ব্যবহার হয় বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী।
তিনি বলেন, জুম থেকে ধান, হলুদ, আদা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন শাক-সবজি সংগ্রহ করতে বাঁশের তৈরি কাল্লোং বা ঝুড়ি বেশি ব্যবহার করে। তাই চেষ্টা করছি এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে। এখনও নিজের হাতের বাঁশের বেত দিয়ে তৈরি করি খাচ্চং, টঙ, থুরিং, হক্কেরেং, ঝুড়ি, কুলা, চাঙ্গারি, হাতপাখা, চালোন, বাঁশি, ডোলা, বই রেখ। চাহিদা থাকায় এসব পণ্য বাজারজাত করেও টাকা আয় করি। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখা কঠিন হবে যদি মানুষের আগ্রহ কমে যায়।
আ.দৈ/আরএস