রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীবাহী ট্রেন নবনির্মিত যমুনা রেলসেতুর ওপর দিয়ে অতিক্রম করার মধ্যে দিয়ে রেলসেতুতে নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হলো।
আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে ট্রেন। সিল্ক সিটি ট্রেনটি সাড়ে ১০টার পর সায়দাবাদ স্টেশনে পৌঁছলে বেলা ১১টা ১২ মিনিটে যমুনা পশ্চিম পাড় সায়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশন ত্যাগ করে নব-নির্মিত রেলসেতুর ওপর দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
যমুনা সেতু পশ্চিম পাড় সায়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে সিল্ক সিটি ট্রেনটি আজ নবনির্মিত যমুনা রেলওয়ে সেতু অতিক্রমের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রেন যাতায়াত শুরু হয়েছে। এই ট্রেনটি রেলওয়ে সেতু অতিক্রম করার মাধ্যমে রেলওয়ের সকল ট্রেন এখন থেকে এই রুট ব্যবহার করবে বলেও জানায় সূত্রটি।
ওই সূত্র আরো জানায়, রেলসেতু দিয়ে ট্রেন অতিক্রম করার ফলে যাত্রীদের বিশ মিনিট সময় কম লাগবে। যমুনা রেল সেতুটি চালু করার ফলে উত্তর- দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রেলপথের প্রায় এক ঘণ্টা সময় কমবে বলেও জানিয়েছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
যমুনা পশ্চিম সায়দাবাদ রেলওয়ের স্টেশনের মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাজশাহী স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা সিল্ক সিটি ট্রেনটি আমাদের সায়দাবাদ স্টেশনে এসে পৌঁছায় ১০টা ৩৮ মিনিটে। ট্রেনটি স্টেশন যমুনা রেলসেতুর উদ্দেশ্যে পশ্চিমপাড় সায়দাবাদ স্টেশন ১১টা ১২ মিনিটে ত্যাগ করে। ১১টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি রেলসেতু অতিক্রম করে যমুনা পূর্বপাড় স্টেশন গিয়ে পৌঁছায়।
যমুনা রেলওয়ে সেতুর প্রকৌশলী আবু তালেব জানান, এখন থেকে রেলসেতুর ওপর দিয়ে নিয়মিত চলাচল করবে। এতে যাত্রীবাহী ব্রডগেজ ট্রেন সেতুর উপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার বেগে অতিক্রম করতে পারবে। আর মিটার গেজ ৯০ কিলোমিটার আর সেই সাথে মালবাহী ট্রেন ৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে।
তবে যমুনা রেলওয়ে সেতুর উপর দিয়ে অতিক্রম করা প্রথম সিল্ক সিটি ট্রেনটি রেলসেতু অতিক্রম করার সময় ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটেছে বলেও জানান তিনি। এই গতি ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন ওই রেলসেতু প্রকৌশলী।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পরে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হয়েছে। এতে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটেছে শিডিউল বিপর্যয়। এজন্য যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো। এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা করে একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগের প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর মাসে যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
সিল্ক সিটি ট্রেনটি সেতু অতিক্রম করার আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৫ ও ৬ তারিখে রেলসেতুর ওপর দিয়ে পরীক্ষা মূলক ট্রেন চালু করেছিলো।
সেতু অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীবাহী ট্রেন সিল্ক সিটিতে রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক পাকসী শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা পাকসী হাছিনা খাতুন, বিভাগীয় সহকারী কর্মকর্তা পাকসী কামরুল ইসলাম সহ রেলওয়ের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীবাহী সিল্ক সিটি ট্রেনটি নবনির্মিত রেলসেতু অতিক্রম করাতে দেশের উত্তরপশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে ব্যবস্থা প্রসার ঘটেছে। সেই সাথে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এএস//