দেশবন্ধু গ্রুপকে বড় অংকের ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে কয়েকটি ব্যাংক। কাড়ি কাড়ি টাকার খেলাপি ঋণের ঘানি টানতে ক্লান্ত বেসরকারী শরীয়াহভিত্তিক স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক। তিন ব্যাংকের এখনো পাওনা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলো বলছে, এ অবস্থায় তাদের আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই। তারা এখন দেশবন্ধু গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
জানা গেছে, দেশবন্ধু গ্রুপটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান-দেশবন্ধু সুগার মিলস ২০১৭ সাল থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে এবং ২০২৩ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে।
দেশবন্ধু গ্রুপের সাতটি কোম্পানির অনুকূলে বিনা -জামানতে তিনটি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ৪ হাজার ৯৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। দেশবন্ধু গ্রুপের কাছে বর্তমানে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের পাওয়া প্রায় ৮০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফান্ডেড ঋণ রয়েছে ৬৭৯ কোটি ৭৬ লাখ। আর নন-ফান্ডেডে রয়েছে ১২৭ কোটি ২১ লাখ। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পাওনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা এবং ইসলামী ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। যা এখন পুরোপুরিই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এই গ্রুপটি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত।
জানা যায়, বিনা জামানতে আওয়ামী আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়েছিলো এই গ্রুপটি। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই পলাতক দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান। ব্যাংকের টাকা না দিয়ে এই গ্রুপটি শুধু ঋণের সুদ মওকুফ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি চালিয়েছে। কালক্ষেপণ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে।
জানা যায়, একাধিকবার তাগাদা নিয়ে দেশবন্ধুর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারছেনা ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের কাছে জামানত না থাকার কারণে অনেকটা হতাশ ব্যাংক বর্তমান পর্ষদ। জোর দিয়েও তেমন কিছু করতে পারছেনা। এক ডজন দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে এই তিন ব্যাংকও রয়েছে। গ্রাহকের টাকা ঠিকমতো না দিতে পারায় চরম দুশসময়ে কাটাচ্ছে এই ব্যাংকগুলো। গ্রুপটির কাছে এই দুঃসময়ে সহযোগিতা চেয়েও পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।
তাই ব্যাংকগুলো শিগগিরই মামলা করবে দেশবন্ধু গ্রুপটি বিরুদ্ধে। এর মধ্যে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক দেশবন্ধু গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী খুব শিগগিরই মামলা করবে জানা গেছে। ইসলামী ব্যাংকও মামলার তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুত করেছে। যে কোনো সময় তারা মামলা দায়ের করবে।
গতকাল এ ব্যাপারে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বিদেশে থাকায় মোবাইলে পাওয়া যায়নি। তার হোয়াটস অ্যাপে একাধিকার বার ফোন ও ম্যাসেজ দিয়ে কোনো সাড়া মেলেনি।
গতকাল এসআইবিএলের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ নাজমুস সায়াদাত বলেন, ‘একাধিকবার চেষ্টা করেও দেশবন্ধু গ্রুপের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করতে পারছিনা। তাই অর্থ ঋণ আদালতে শিগগিরই মামলা করা হবে।’
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া জানান,‘সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তারা টাকার দেয়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি। তাই আমরা খুব শিগগিরই মামলা করতে যাচ্ছি।’
আ. দৈ/ এএস