জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অবশিষ্ট কাজের ভার সেনাবাহিনীর হাতে কবে নাগাদ যাবে তা আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম।
সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা নিয়ে ইউজিসিকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেটি নিয়মানুযায়ী শুরুতে যাবে মন্ত্রণালয়ে। তাই কবে নাগাদ সেনাবাহিনী কাজ হাতে পাচ্ছে, সেই দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
জবি উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, এটা আমাদের হাতে নাই। এটা এখন ইউজিসির হাতে। আমরা ইউজিসিতে চিঠি দিয়েছি, সেখানে আপডেট জানতে রেজিষ্ট্রার স্যারকেও পাঠানো হয়েছে। ইউজিসি বলেছে যে তারা এই চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। আমাদের বেশিরভাগ কাজ ইউজিসি হয়ে সরকারের কাছে যায়। এটার অথোরিটি হল ইউজিসি, তারা আবার সেটা সরকারের মাধ্যমে করেন। তাই
রোববার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় উপাচার্যের কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জবি উপাচার্য ।
লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, দূর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত প্রকল্পকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা যায় তার উপায় খুঁজতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে নিরলসভাবে যোগাযোগ করা হয়। এজন্য ইউজিসিকে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনে লিখিতভাবে অনুরোধ করতে হবে। জবি কর্তৃপক্ষ সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে ইউইজসিকে চিঠি দিয়েছে, যা এখন সেখান থেকে মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। জবি কর্তৃপক্ষ তা নিয়মিত মনিটরিং করছে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প ও অস্থায়ী আবাসনের অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যক্রম তুলে ধরেন উপাচার্য। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, রেজিষ্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষকদের সাদা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অবশিষ্ট কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসনের দাবিতে ডাকা অনশনে যোগ দেয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা মূলত তিনটি দাবি নিয়ে অনশনে বসেছেন।
১.সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে।
২. পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে।
৩. যতদিন পর্যন্ত আবাসনের ব্যবস্থা না হয় ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। আজ দুপুর ১টার দিকে শহীদ মিনারের সামনে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষকরা। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার খাওয়ার অনুরোধ জানালেও তাতে সাড়া মেলেনি।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।
অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়া হয়।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।
পরের বছর ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মোট ২০০ একর জমির মধ্যে ১৮৮ দশমিক ৬০ একর জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝে পায়। কিন্তু এখনও অবশিষ্ট ১১ দশমিক ৪০ একর জমি বুঝে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ৫ নভেম্বর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর ১১ নভেম্বর ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবিতে সচিবালয় ঘোরাও করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সেদিন শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তারা সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের তিন দিন সময় চাইলে সচিবালয়ের সামনের অবস্থান থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পরদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরে সায় দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গত সপ্তাহে অনশনের ডাক দেন।
আ. দৈ/ সাম্য