শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫,
৫ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
ব্যাংক-বীমা
শিগগিরই চুক্তিভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের অপসারণ
রমজান আলী
Publish: Tuesday, 10 September, 2024, 6:53 PM  (ভিজিট : 32)


অর্থনৈতিক প্রতিবেদকঃ খুব শিগগিরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ভেঙে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালক ও চুক্তিভিত্তিক এমডিদের অপসারণ করা হবে। সেখানে এমনভাবে সাজানো হবে আর্থিকখাতে কোন দুর্নীতি ব্যক্তির স্থান হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর্থিকখাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এতে আর্থিকখাতে অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। তাই নতুন অন্তবর্তীকালিন সরকার আর্থিকখাতে নতুন করে সংস্কার করবে। 

গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) অন্তবর্তীকালিন সরকার পুরো খাতে সংস্কার করবে বলে জানান অন্তবর্তঅকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান এমডিদের অনেকে আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সাবেক অনেক এমডিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানও চলছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। 

অর্থনীতিবিদরা বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকিংখাতে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। যাদের মাধ্যমে এই দুর্নীতিগুলো হয়েছে তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’ 

জানা যায়, এর মধ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন চেয়াম্যান নিয়োগও দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের অপসারন করা হয়েছে। এছাড়া এনবিআরের চেয়ারম্যানকেও অপসারণ করা হয়েছে। 

এরই মাঝে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ), পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি, পদ্মা অয়েলের, যমুনা অয়েলসহ ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’র (আইসিবি) পরিচালনা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আর্থিক খাতের আরোও অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়েছে অন্তবর্তীকালিন সরকার। 

এছাড়া এস আলম গ্রুপের ৭টি ব্যাংকসহ বেসরকারি ১০টি ব্যাংকের পুরোনো পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দিয়েছে অন্তবর্তীকালিন সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্নরসহ তিন ডেপুটি গভর্নরকেও অপসারন করা হয়েছে। এভাবে পুরো আর্থিকখাতে সংস্কার করছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। 

বর্তমান সার্চ কমিটির সূত্রে জানা যায়, এ মাসের মধ্যে সরকারি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে ভেঙে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দেয়া হবে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিংখাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর গত জুন পর্যন্ত সময়ে বিতরণ করা ঋণের ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি হয়ে পড়েছে ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলছেন, আর্থিকখাতে সংস্কার খুব জরুরি। কারণ গত ১৫ বছরে এইখাতে অবস্থা শোচনীয় করে ফেলছে আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরবর্তী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন। তার মতো একজন দক্ষ অভিজ্ঞ ব্যক্তির গভর্নর হিসেবে নিয়োগ লাভ অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং খাতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক। আগে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

 তিনি দেশের আর্থিক খাতের একজন বিশ্লেষক হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে ডলার ধার দিয়েছে প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের। এসব ডলারের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নথিতে দেখা গেছে, ২০ গ্রাহকের কাছেই আটকে আছে প্রায় ৭ কোটি ডলার। সদ্য সমাপ্ত গত জুলাইয়ের শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৯২ কোটি ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের দেওয়া আছে ২৬০ কোটি ডলার, যা বড় অংশই আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে আছে। কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকায় টিকে আছে, আবার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়েও অনেকে ফেরত দিচ্ছে না। এটাই ব্যাংক খাতের প্রকৃত পরিস্থিতি। আসলেই অবস্থা আরও খারাপ কি না, সেটা বের করা জরুরি। এ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। এরপর অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে কোন সংস্কার এখনই শুরু করা দরকার। ব্যাংক খাত সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে যেটা করা দরকার, তা এখনই শুরু করতে হবে। না হলে বড় বিপদ আসবে পুরো আর্থিক খাতে।

জানা যায়, গত ১৫ বছরেও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সরকার দলীয় লোককে পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিয়েছিলো। এই নিয়োগের ফলে আর্থিকখাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির কারনে দেশের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় লোক নিয়োগ দিয়ে তাদের দলীয় লোক বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করেছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেই আর্থিকখাতে ব্যাপক সংস্কার শুরু করে । 

আ. দৈ. কাশেম/ রমাজান

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দুদকের মামলায় বিএফআইইউ'র মাসুদ বিশ্বাস কারাগারে,রিমান্ড শুনানি রোববার
সীমান্তে সংঘর্ষ: দুঃখ প্রকাশ করল বিএসএফ
ইসিকে সরঞ্জাম সহায়তা দেবে ইউএনডিপি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি রোববার
বড় জয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা গন সংযোগে ব্যস্ত
চায়না পোশাকে সয়লাব দেশ
দুদকের মামলায় বিএফআইইউয়ের মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার
দক্ষতা ও নিষ্টার পুরস্কার, দুদকের মহাপরিচালক-পরিচালক পদে পদোন্নতি
রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে: সালাউদ্দিন
ব্যাংক-বীমা- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝