যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী জিমি কার্টার মারা গেছেন। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসে নিজ বাসভবনে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১০০ বছর বয়সী কার্টারকে একজন "অসাধারণ নেতা" হিসেবে উল্লেখ করে শোক প্রকাশ করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
কৃষক থেকে প্রেসিডেন্ট কার্টার
১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জর্জিয়ার ছোট শহর প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেন জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র, যিনি পরিচিত হন জিমি কার্টার নামে। এক কৃষক ও দোকানির সন্তান কার্টার নেভাল একাডেমি থেকে স্নাতক শেষ করে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। পরে পরিবারের বাদাম চাষাবাদের ব্যবসা দেখভাল করতে সেই চাকরি ছেড়ে দেন।
ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অটুট থেকে কিশোর বয়সেই সানডে স্কুলের শিক্ষকতা শুরু করেন। এই নৈতিক চেতনা প্রেসিডেন্ট থাকাকালেও তার কাজে প্রভাব ফেলে।
কার্টার ১৯৭৬ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হন। ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হন তিনি।
কার্টারের দাম্পত্য জীবন
১৯৪৬ সালে রোসালিন স্মিথকে বিয়ে করেন জিমি কার্টার। দীর্ঘ ৭৭ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের চার সন্তান, ১১ নাতি-নাতনি এবং ১৪ প্রপৌত্র রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ৯৬ বছর বয়সে রোসালিন মারা যান। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অসুস্থ কার্টারকে হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় দেখা যায়।
শাসনকাল ও নোবেল প্রাপ্তি
কার্টারের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা সময় যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সংকট ও ইরানের জিম্মি সংকটের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। যদিও ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়।
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর তিনি মানবাধিকার, দারিদ্র্য বিমোচন, আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে কাজ করেন। এ কারণেই ২০০২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
শেষ দিনগুলো
ত্বকের ক্যানসারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে থাকা কার্টার চিকিৎসা গ্রহণ না করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিজ বাসভবনে বাকি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন।
জিমি কার্টারের ছেলে চিপ কার্টার এক বিবৃতিতে বলেছেন, "আমার বাবা শুধু আমার নয়, শান্তি, মানবাধিকার এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাসী সবার কাছে একজন নায়ক।"
লেখক কার্টার
প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে শিশুসাহিত্য—দুই ডজনের বেশি বই লিখেছেন জিমি কার্টার। তার অন্যতম গ্রন্থ Faith: A Journey for All প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।
আ. দৈ./ সাধ