প্রাইভেট কার চাপায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে প্রতিষ্ঠানটিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থী সাদমান তূর্য বলেন, সড়ক নিরাপত্তা আইন জোরদার করুন, দেশের বিচারব্যবস্থাকে একটি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হবার হাত থেকে রক্ষা করুন। আর কোনো প্রাণ যেন এভাবে সড়কে কোনো মাতাল, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির হাতে না ঝড়ে; আর কোনো পরিবার যেন নিজেদের সন্তানকে না হারান, কোনো মায়ের কোল যেন আর খালি না হয়।
অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, এই ব্যাপারে দৃষ্টি প্রদানের দায়িত্ব সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারেরও। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। অপরাধী যে পরিবারেরই সদস্য হোক না কেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন- এই ব্যাপারটি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হোক। অভিযুক্তদের আইনজীবী গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
একইসাথে কিছু সংবাদমাধ্যমেও এই হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে অপপ্রচারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা এই অপপ্রচারের তীর নিন্দা জানাই এবং দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।
গত বৃহস্পতিবার গভীররাতে পূর্বাচল উপশহরের ৩০০ ফুট সড়কে প্রাইভেট কার চাপায় রূপগঞ্জ পুলিশের চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ মারা যান। আর গুরুতর আহত হন সহপাঠী মেহেদী হাসান খান ও অমিত সাহা।
ঘটনার সময় প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন, তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে মুবিন আল মামুনের পাশাপাশি তার বন্ধু মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ডোপ টেস্টে মুবিন ও মিরাজুলের ফল ‘পজিটিভ’ আসে।
নিহত মুহতাসিম মাসুদের বাবা মাসুদ মিয়া গতকাল শুক্রবার সকালে রূপগঞ্জ থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ, যার শুনানির জন্য আগামীকাল রোববার দিন ঠিক করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী সাদমান তূর্য বলেন, আমরা পূর্বেও দেখেছি, প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যবৃন্দ কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত থাকলেও- কোনো সিভিয়ার অফেন্সে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া থেকে তাদের নিস্তার লাভের দৃষ্টান্ত। আমরা এই ঘটনায় এই ব্যাপারটির আশঙ্কা করছি।
এছাড়াও শুরু থেকেই মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানা এবং হত্যাকারীর পরিবারের বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা তথ্য নিউজ মিডিয়ায় প্রদান থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা আমাদেরকে শঙ্কিত করেছে।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে-
১।যেকোনো মূল্যে এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে;
২।আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আসামিপক্ষকে বহন করতে হবে;
৩।নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে আসামিপক্ষকে বাধ্য করতে হবে;
৪।তদন্তে কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে;
৫।সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যাতে আর কারো প্রাণ না ঝরে, সেজন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আ. দৈ/ সাম্য