রাজনীতি করতে হলে রাজকীয় মন-মানসিকতা প্রয়োজন। যারা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতি করছেন, তাদের রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জাতীয় কৃষিবিদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, রাজনীতি হলো দেশ ও মানুষের সেবার জায়গা। কিন্তু যারা রাজনীতিকে ব্যক্তিগত আখের গোছানোর মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাদের জন্য রাজনীতিতে জায়গা নেই। তরুণ প্রজন্ম এমন রাজনীতিবিদদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেখা যাচ্ছে, অনেকে নিজেদের স্বার্থে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের বলছি, দেশের মানুষ আপনাদের আর চায় না। নতুন প্রজন্ম সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব খুঁজছে।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, তারা ক্ষমতায় থেকে মেধার জেনোসাইড ঘটিয়েছে। সন্ত্রাসীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেশকে খুন, গুম ও ধর্ষণের চারণভূমিতে পরিণত করেছে। উন্নয়নের নামে জাতিকে ধোঁকা দেয়া হয়েছে।
আয়নাঘরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমাকেও স্বৈরাচার সরকারের সময়ে দুই ঘণ্টা আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল। সেখানে অনেক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তারা জানত না তাদের পরিবার বেঁচে আছে কি না।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের নামে সাজানো নাটক করে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। জাতি একদিন এই মিথ্যাচারের আসল তথ্য জানতে পারবে।
জামায়াত নেতাদের সততার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দলের মন্ত্রীরা সরকারের অংশ হয়েও কোনও তদবির বা অনিয়ম মেনে নেননি। তাদের সব কর্মকাণ্ড আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার কথা মাথায় রেখে পরিচালিত হয়েছে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এএফবি’র সভাপতি ড. এটিএম মাহবুব ই ইলাহি (তওহিদ)। প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ মুহাম্মদ মাসউদ ও ড. মোশাররফ হোসেনসহ আরও অনেকে।
এদিকে শুক্রবার সকালে কেরানীগঞ্জে জামায়াতের ঢাকা জেলার কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অনেক সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনারা কত দিনে নির্বাচন চান? আমি উত্তরে বলেছি, আমরা ১৭ বছর অপেক্ষা করেছি। অন্যায়-দুর্নীতি সংস্কারের পর আমরা নির্বাচন চাই। তবে বর্তমান সরকার যেন সংস্কারের জন্য একটি সেকেন্ডও বেশি সময় ব্যয় না করে। আমরা ক্ষমতার জন্য অস্থির নই।
তিনি বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জোর করে ক্ষমতায় আসেনি। দেশবাসী তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। এটা বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা। তবে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট ঠেকাতে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সাহস সহযোগিতা করবো।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার দিন পর্যন্ত দেশবাসীকে হত্যা করেছে। স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও দেশ এখনো স্বাধীন হয়নি। স্বৈরাচারী সরকার আমাদের শত শত ভাই-বোনকে খুন করেছে। নৈতিক সাহস না থাকায় পতিত সরকার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
আ.দৈ/এআর