তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে অসন্তোষ থামছেনা। জুাবায়ের পন্থীরা বলছেন তারা সাদ পন্থীদের ইজতেমা করতে দিবেনা। আর সাদ পন্থীদের দাবি তারাই মুল, তারাই শুরু করেছেন ইজতেমা। এ নিয়ে কয়েক বছর ধরে চলছে উত্তেজনা। এক পর্যায়ে তুই পন্থীদের সময় ভাগ করে দেয়া হয়। তবে এবার সাদ পন্থীদের অনুমতি না দেওয়ায় অসন্তোষ তীব্র আকার ধারন করছে।
গত বৃহস্পতিবার সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটেছে। এর আগেও কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দুই গ্রুপের মধ্যে। জোড় ইজতেমাকে ঘিরে উদ্ভূত যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে টঙ্গীতে সেনাবাহিনী টহল জোরদার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ অবস্থা চলতে থাকলে ইজতেমা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী স্টেশন রোড ও মিলগেট এলাকায় এই টহল জোরদার করে। সেনাকর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে আছে। বিশেষ করে বিশ্ব ইজতেমায় বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর আমরা অধিক সতর্ক আছি।
জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের ভেতরে জুবায়েরপন্থিদের কয়েক হাজার সাথী রয়েছে। তুরাগ নদীর পশ্চিম তীরে সাদপন্থিদের মসজিদের সামনে কয়েক হাজার সাদপন্থি মুসল্লি অবস্থান নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সাদপন্থিদের উপর জুবায়েরপন্থিদের হামলা সাদপন্থিদের পাঁচজন আহত হয়। এ ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৩৪ জনকে শনাক্ত করে ও ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে জুবায়েরপন্থিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার প্রতিবাদে জুবায়েরপন্থিরা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও স্বারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা দেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের চারপাশে বাংলাদেশ পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়ন করা হয়। টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সাদপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম জানান, বৃহস্পতিবার জুবায়েরপন্থিদের হামলায় আমাদের ৫ জন সাথী আহত ও একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এই ঘটনায় আমাদের সাথী শিহাব উদ্দিন বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৩৪ জনকে শনাক্ত ও বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। গোপনীয়তার স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
আগামী ৩১ জানুয়ারি দুই পর্বে শুরু হচ্ছে দেশের তাবলিগে জামায়াতের সবচেয়ে বড় আয়োজন বিশ্ব ইজতেমা। শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হানের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, প্রথম পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এতে অংশ নেবেন শুরায়ী নেজামের অনুসারীরা। অন্যদিকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। এই পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
বিশ্ব ইজতেমার মাঠ হস্তান্তর সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম পর্বের আয়োজনকারীরা আয়োজন শেষে ইজতেমার মাঠ বিভাগীয় কমিশনার ঢাকার নেতৃত্বে গঠিত বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতি সংক্রান্ত কমিটিকে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে বুঝিয়ে দিবেন। আর দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনকারীরা ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উক্ত কমিটির থেকে ইজতেমার মাঠ বুঝে নিবেন এবং ইজতেমা শেষে ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কমিটির কাছে মাঠ হস্তান্তর করবেন।
এ বিষয়ে শুরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থি) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, সাদপন্থিদের মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বাদ জুমা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, সাদপন্থিদের দেয়া একটি মামলা হয়েছে। শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আ. দৈ. /কাশেম/ ইমু