ইসলামে জুমার দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে জুমার দিনে আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হওয়ার নির্দেশ এসেছে। ইরশাদ হয়েছে:
“হে মুমিনরা! জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান জানালে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো। এরপর নামাজ শেষ হলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হও।” — (সুরা জুমা, আয়াত: ৯–১০)
জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালনে গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়।
জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা: রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে জুমার দিনের পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন:
১. এই দিনে আদম (আ.)—কে সৃষ্টি করা হয়।
২. এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়।
৩. এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
৪. এ দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, যখন বান্দা যা চায় আল্লাহ তাআলা কবুল করেন — যদি হারাম কিছু না চায়।
৫. কিয়ামত এ দিনেই সংঘটিত হবে। হাদিস সূত্র: ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৮৯৫
জুমার নামাজ ও আমল: রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সুন্দরভাবে পবিত্র হলো, সুগন্ধি ব্যবহার করল, তারপর মসজিদে গিয়ে নম্রভাবে নামাজ আদায় করল এবং ইমাম খুতবা দেওয়া শুরু করলে চুপ থাকল— তার আগের ও পরের জুমার মধ্যকার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” — (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)
আরেক হাদিসে এসেছে: “পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা এবং এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান — এ সময়গুলো মধ্যে পাপ মোচন করে, যদি কেউ কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।” — (মুসলিম, হাদিস: ২৩৩)
গোসল ও আগেভাগে মসজিদে যাওয়া: রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, দ্রুত মসজিদে গেল এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনল, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব দেওয়া হবে।” — (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৫)
আগেভাগে মসজিদে প্রবেশ ও খুতবা শ্রবণ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে প্রথমে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। এরপর যারা আসে, তারা অনুপাতে গরু, ছাগল, মুরগি ও ডিম সদকা করার সমতুল্য সওয়াব পায়। যখন ইমাম খুতবা শুরু করেন, ফেরেশতারা খুতবা শুনতে বসে পড়েন।” — (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৪১)
দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত: জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছু চায়, আল্লাহ তা কবুল করেন।
রাসুল (সা.) বলেন, “এই মুহূর্তটি আছরের শেষ সময়ে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করো।” — (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৮)
সুরা কাহাফ তিলাওয়াত: জুমার দিনের অন্যতম সুন্নত আমল হলো সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তা তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত করে দেবে।” — (সহিহ তারগিব, হাদিস: ১৪৭৩)
আরেক হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত মুখস্থ রাখবে, দাজ্জালের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।”
দরুদ শরিফ পাঠ: জুমার দিন নবীজি (সা.)—এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেন:
“তোমাদের দিনের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এ দিনেই আদম (আ.)—কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এই দিনেই তার ইন্তেকাল হয়েছে। এ দিনেই শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে ও বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” — (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭)
জুমার দিন আল্লাহর বিশেষ রহমতের দিন। এই দিনটিকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিয়ে পালন করলে একজন মুসলিমের অনেক গুনাহ মাফ হতে পারে এবং জান্নাতের পথ সুগম হয়। তাই আমাদের উচিত, প্রতি জুমার দিনকে যথাসম্ভব ইবাদত, দোয়া ও ভালো আমলের মাধ্যমে কাটানো।
আ.দৈ/ওফা