দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মেন্ডেলার ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বর্ণবাদ, অন্যায়, অবিচার ও শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে গেছেন বিশ্ব সমাদৃত এ নেতা। তিনিই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ নির্মূল করে বহুজাতিগত গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত করেন। বিশ্ব নন্দিত এ নেতা ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা নেলসন ম্যান্ডেলার তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর রসবোধ, তিক্ততা ভুলে বৈরী প্রতিপক্ষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উদারতা, এসব মিলিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন কিংবদন্তিদের কিংবদন্তি।
নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার এম্ভেজে গ্রামে। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তার ২৭ বছরের কারাজীবনের মধ্যে ১৮ বছর কাটাতে হয়েছে কুখ্যাত রোবেন দ্বীপের কারাগারে।
বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মহান রাজনীতিবিদ। বর্ণবাদবিরোধিতা তথা মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা নেলসন ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিংবদন্তিদের কিংবদন্তি ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
সেখানে তিনি উপনিবেশ-বিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন ও ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে ম্যান্ডেলা মহাত্মা গান্ধির দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী কর্মীরা আন্দোলনের প্রথম দিকে গান্ধির অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিল।
ম্যান্ডেলাও প্রথম থেকেই অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ খ্রস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
আ. দৈ./ সাধ