সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫,
৭ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
শিক্ষা
চকরিয়ায় রমরমা কোচিং বাণিজ্যে অসহায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা
বিজন কুমার বিশ্বাস, কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
Publish: Tuesday, 3 December, 2024, 5:49 PM  (ভিজিট : 49)

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ, চকরিয়া গ্রামার স্কুল, কিডস কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজ, চকরিয়া সরকারি কলেজ, ডুলহাজারা কলেজ, বদরখালী কলেজ অন্যতম।

এছাড়া অসংখ্য অনিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি চোখে পড়ার মতো। ভাড়া বাসায় কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে স্কুল খুলার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। আর এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনে বা শুরুতে যে লোক দেখানো আয়োজন বা সাইনবোর্ড ঝুলানো হয় কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ফিতা কাটা হয়, তাতে জনগণের মনে একটা আস্থা তৈরি হলেও বছর শেষে অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে, ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ হয়ে যায় অন্ধকার।

বোর্ড পরীক্ষা তো দূরের কথা পাঠদানের অনুমতি ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তির বড় বড় পোস্টারে ছেঁয়ে যাচ্ছে অলি-গলিতে। পৌরশহরের প্রতিটি গলিতে যেনো একটা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানের আয়োজন যত বেশি লৌকিক সে প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের ঝোঁকও বেশি। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা ও বাস্তবসম্মত জ্ঞানের চর্চা হচ্ছে কি-না সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই প্রশাসন ও সচেতন মহলের।

এই অসম প্রতিযোগিতার বাজারে শিক্ষা বাণিজ্যের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে অভিভাবকদের অসচেতনতা। তাই একা শিক্ষকের দোষ দেয়াটাও সমীচীন নয়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আরও বেশি যুগোপযোগী ও সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

দুঃখের বিষয় হলো স্কুল সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেশি আনাগোনা থাকে কোচিং (বিকাল-সন্ধ্যা-ভোরে) সময়ে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে অনিয়মিত হলেও কোচিং সেন্টারে সে ক্যাপ্টেনের ভূমিকায়। মোট কথা মার্কেটিং হোক, আধুনিকতা হোক- কিন্তু এই ফাঁকে আমাদের উঠতি প্রজন্ম যেনো বিপথগামী না হয়। কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবন নিয়ে শিক্ষা ব্যবসায়ীরা যেভাবে মার্কেটিং প্লান করছে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারলেই চোখে পড়ছে। কোনদিকে যাবে অভিভাবক সমাজ? কোনদিকে যাবে ছাত্র সমাজ? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আগামীর শিক্ষা?এমন একটা ‘সন্দেহ চোখ’ সবসময় তাড়া করছে অভিভাবক ও সচেতন মহলের। আমরা সচেতন হলেই সমাজের অনেক অনিয়ম বন্ধ হবে, দুর্নীতির লাগাম টানা যাবে।

খুব অবাক করা মতো বিষয় হলো এতোদিন সুনামের সাথে যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষাসেবা প্রসারে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছিলো, কালক্রমে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা রমরমা কোচিং বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে ক্লাসরুমে কেবল হাজিরা ও নামমাত্র বই-খাতা নাড়াচাড়ার অভিযোগ রয়েছে সচেতন অভিভাবকদের। এর কারণ হিসেবে অনেক শিক্ষকের দাবি, মাসিক বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই উন্নতমানের (বাজারদর) বেতনস্কেল কিংবা নিয়মিত বেতনও দিতে চায় না অনেক প্রতিষ্ঠান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের হাইস্কুলে এমন অনেক শিক্ষক ছিলেন (যারা এখনো শিক্ষা দিচ্ছেন) যারা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পড়ানো তো দূরের কথা এমনকি নোট বা লিখতে পর্যন্ত  দিতেন না, হুংকার দিয়ে বলতেন, “কেউ কোনো লেসন খাতায় তুলবে না, কোচিং (প্রাইভেট) সেন্টারে বিস্তারিত পড়ানো হবে।” আর প্রাইভেট না পড়লে নাম্বার কমিয়ে দেয়া বা ফেল করানোর মতো রুচিশীল (!) শিক্ষকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।

যে স্বপ্ন নিয়ে তার সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন, তার কতটুকুই বা পূরণ হচ্ছে এমন প্রশ্নে অভিভাবকরা যে উত্তর দেন তাতে কেবল অভিযোগের অংশটাই বেশি। আগেকার মতো ত্যাগী, মনোযোগী, স্বপ্রণোদিত ও আদর্শ শিক্ষকের অভাব দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে।

যে সময়টা খেলাধুলা ও বিনোদনের সেই সময়টাও কোচিং/প্রাইভেটে দৌড়াতে হচ্ছে। এই চিত্রটি এখন চকরিয়ার সবগুলো নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারপাশে বেশ শক্ত অবস্থানে সাইনবোর্ড’সহ প্রতিষ্ঠিত। এর পেছনের কারণ হলো ক্লাসে ঠিকমতো না পড়ানো, জবাবদিহিতা না থাকা। শিক্ষাটা সাধারণের (সবার) হওয়ার কথা থাকলেও কিন্তু শিক্ষা হয়ে যাচ্ছে অর্থবান, ধনীদের। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্র ছাত্রীরা এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। ফলে স্কুল কলেজ থেকে ঝড়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। এর দায়রা কার?

অনেক ক্ষেত্রে  দেখা যায়, যে শিক্ষক স্কুলে ৮ থেকে ১৫ হাজারের বেতনে চাকরি করেন, তার কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্য মাসে অর্ধলক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আশ্চর্যজনক হলেও একেবারে ওড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। এছাড়া নতুন ফরম্যাটে ফিরতে প্রচলিত কোচিং বাণিজ্য আর তা হলো ডে-কেয়ার বা স্পেশাল ব্যাচ। যে শিক্ষক ক্লাসে পড়িয়েছেন সেই তিনিই আবার একই বিষয় একই শিক্ষার্থীদের সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, নোট করে দিচ্ছেন। তাহলে ক্লাসে নয় কেন? এমন প্রশ্নে অনেক শিক্ষক চোখ বড় করে দেখবেন আবার অনেকেই হেসে বাস্তবতা শেখাতে চাইবেন।

এই যদি হয় শিক্ষার মানচিত্র তাহলে ‘আদর্শ শিক্ষক’ ধারণাটি চাপা পড়ে যাবে এসব বাণিজ্যে। মূলত শিক্ষা ব্যবস্থায় সবার উপযোগী রূপরেখা দরকার। এবং তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগ জরুরি বলে অভিভাবক ও সচেতন মহল মনে করেন। এটি নিয়ে যেনো কোনো দুষ্টুচক্র সিন্ডিকেট করতে না পারে সেদিকে সমাজের নেতৃস্থানীয়দের ও সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। কোচিং বাণিজ্যের দরকার আছে, তবে তা কতটুকু? শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ছাত্র ছাত্রী অভিভাবক ও সচেতন মহল।

আ. দৈ. /কাশেম /বিজন
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মাদারীপুরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার ৮৯তম জন্ম বার্ষিকী পালন
ফরিদপুরে নানা আয়োজনে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
ফরিদপুরে টাকা না দেয়ায় ওয়ার্ড বয়দের হেনস্তায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ
গোপালগঞ্জে শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালিত
ময়মনসিংহে ভয়ংকর রক্ত সিন্ডিকেট
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

রেলওয়ের উন্নয়নে অনুদান দিবে দক্ষিণ কোরিয়া
ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা
থানায় বসে এসআইয়ের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
‘ঋণখেলাপিরা যাতে বিএনপির মনোনয়ন না পায় সে চেষ্টা করব’
আরাকান আর্মির হাতে টেকনাফমুখী ৩ পণ্যবাহী জাহাজ আটক
শিক্ষা- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝