প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। চাল, আটা, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই, যার দামে স্বস্তি আছে। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিয়েও যেন বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না সরকার।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ১২টি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল, পাম তেল, চালের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল, আলু, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, দারুচিনি, ধনে, গরুর মাংস ও ডিম।
এদিকে দাম কমাতে সরকার কিছু পণ্য আমদানি ও শুল্ক-কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া নীতি সুদহার বাড়িয়ে জিনিসপত্রের দাম কমানোর পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একইসাথে দেশের বাজারে কৃষিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। খুলনা-ঢাকা রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটির যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ট্রেনটির প্রথম যাত্রার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের (পশ্চিম) চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা রেলস্টেশন থেকে পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। এটি যশোরসহ বিভিন্ন স্টেশন হয়ে মালামাল নিয়ে ঢাকা তেজগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছায় আজ রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনে কৃষিপণ্য স্পেশাল নামে একটি নতুন ট্রেন চালু করেছে। এই ট্রেনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মালামাল অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে পরিবহন করা যাবে। এই স্পেশাল ট্রেনে সাধারণ লাগেজ ভ্যানের পাশাপাশি রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানেরও ব্যবস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে মাছ, মাংসসহ পচনশীল পণ্য পরিবহণ করা যাবে।
কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনে প্রতি কেজি কৃষিপণ্যে ভাড়া খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৪৭ পয়সা, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৩৫ পয়সা, চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৩০ পয়সা, ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ০৮ পয়সা, পার্বতীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৩৪ পয়সা, জয়পুরহাট থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৩০ পয়সা, সান্তাহার থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ১৮ পয়সা, রহনপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
ট্রেনটি তিন দিন ৩টি রুটে চলাচল করবে। সূচী অনুযায়ী প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে খুলনা থেকে যাত্রা করে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা তেজগাঁও পৌঁছাবে। আর প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন থেকে যাত্রা করে ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছাবে। প্রতি শনিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে রহনপুর স্টেশন থেকে যাত্রা করে ঢাকা পৌঁছাবে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে।
খুলনা-ঢাকা রুটে খুলনা রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যশোর, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, বারোবাজার, কোটছাদপুর, সাফদারপুর, আনসারবাড়িয়া, উথলী, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদাহ, ভেড়ামারা, ঈশ্বরদী, জয়দেবপুর, বিমানবন্ধর ও ঢাকা তেজগাঁও ট্রেনটি থামবে।
আর বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে পাবর্তীপুর, বিরামপুর, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, জামালগঞ্জ, আক্কেলপুর, সান্তাহার, আহসানগঞ্জ, মাধনগর, নাটোর, চাটমোহর, লাহোড়ীমোহনপুর, উল্লাপাড়া, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, বিমানবন্দর ও তেজগাঁও থামবে।
এসব রুট থেকে নিয়মিত কৃষিপণ্য ঢাকায় আনা হলে রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষি পণ্যের দাম কমবে বলে মনে করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের (পশ্চিম) চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, দেশের কৃষিপণ্যের উর্ধ্বগতি রয়েছে। পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য সবজি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা এবং দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহনের জন্যই এই স্পেশাল ট্রেনটি চালু করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে সূলভ মূল্য পণ্য ঢাকায় নিতে পারে ও ন্যায্যমূল্য পায় এবং তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদনকারীরাও যেন ন্যায্যমূল্য পায় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এটি চালু করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ কিংবা উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকারের এ সকল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এ পদক্ষেপগুলো নিতে দেরি করে ফেলেছে সরকার। বাজার পরিস্থিতি সামলাতে নতুন সরকারকে শুরু থেকেই উদ্যোগী হওয়া দরকার ছিল। যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর সুফল যাতে পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে নজরদারি থাকতে হবে।
এর আগে বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর পেছনে জড়িত সিন্ডিকেটগুলোর উৎস চিহ্নিত করে প্রয়োজনে তাদের বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করার কথা বলেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
গত ১৯ অক্টোবর (শনিবার) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আসিফ মাহমুদ।
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, প্রশাসনে অসহযোগিতার কারণে সরকার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের সহযোগিতা না পেলে প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ দেয়া হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে সরকার কোনো ছাড় দেয়া হবে না।