দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচনী হলফ নামায় দেশি সম্পদের পাশাপাশি বিদেশি সম্পদের হিসাব বিবরণীও দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সম্পদের বিবরণী চাচ্ছি, সেখানে বিদেশি সম্পদের হিসাব না দিলে তা অন্যায় হবে। কারো যদি অনুপার্জিত অর্থ থাকে সেটাও আমাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সৎলোককে নির্বাচিত করতে হবে। কে কোন দল করে সেটা, বড় ব্যাপার না, দেখতে হবে লোকটা সৎ কী না? দুদকের মামলার আসামি হতে পারে, এমন লোককে গ্রহণ করলে বিগত সময়ের মতোই পরিণতি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রার্থীরা হলফনামায় দেশি বিদেশি আয়ের হিসেব দিতে হয়। কেউ গোপন করলে, তা খুঁজে বের করে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপনের জন্য গণমাধ্যমকে আহবান জানান।
আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) সিলেটের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে দুদকের ১৯১ তম গণশুনানি অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এরআগে দুদক সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন তিনি।
সিলেটে দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, যদি এই ভবনটার উদ্বোধন না করা লাগতো, তাহলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। সিলেট পুণ্যভূমি, পুণ্যভূমিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অফিস কেন হতে হবে। এই পুণ্যভূমিতে আমরা সবাই যদি পুণ্যবান হতাম ও ধর্মের বিধিবিধান মেনে চলতাম তাহলে দুর্নীতি করতাম না এবং এই অফিসের দরকার হতো না। কিন্তু আমাদের কিছু বিচ্যুতি ঘটে এবং ঘটার নজির আছে বেশ আগে থেকেই। সিলেট অত্যন্ত সমৃদ্ধ এলাকা। এরকম ধনী জেলা বাংলাদেশে অনেক কম আছে। ধন যেখানে বেশি সেখানে দুর্নীতিরও প্রকোপ কিছুটা থাকে।
আজ “দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা, গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’’ এই স্লোগান নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর সংস্থাসমূহে সেবার মান বৃদ্ধি, সেবাগ্রহিতাদের হয়রানী রোধ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সিলেটে দুদকের ১৯১ তম গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বলেন, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার কৃষি সম্পত্তি ছিলো ৫ দশমিক ২ একর, তবে আমরা অনুসন্ধান করে পাই ২৯ একর। শুরুতে সেই নমিনেশন বাতিল হওয়ার কথা কিন্তু তা বাতিল হয় নাই। দুদক সেটি তদন্ত করে বের করলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তিনি বলেন, দুদক বিচারকারী না। দুদকের দায়িত্ব মামলার তথ্য উপাত্ত আদালতে উপস্থাপন আর বিচারের দায়িত্ব আদালতের।
প্রধান অতিথি বলেন,"আগস্টের পরে এই বিশাল পরিবর্তন ও বিশাল প্রত্যাশা জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এই জনআকাঙ্ক্ষার সাথে আমাদেরকে মেলাতে না পারলে জাতির সাথে একটা বড় রকম প্রতারণা করা হবে। আপনারা এই প্রতারণায় অংশ নিবেন না।" তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে কাজ করার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ” অতীতের যে কোন কমিশনের চাইতে বর্তমান কমিশন একটু আলাদা। এই কমিশনের ভেতরে যে দুর্নীতি আছে এটা আমরা প্রশ্রয় দেইনি। যার যেখানে দুর্নীতির স্মেল পাওয়া গেছে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অনুসন্ধান এবং তদন্ত সক্রিয় আছে"।
এছাড়া দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী, ডিআইজি মোঃ মুশফেকুর রহমান, দুদক মহাপরিচালক(প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মু. মাসুদ রানা ও পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
উক্ত গণশুনানিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার আলম সভাপতিত্ব করেন।গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানীর শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগসমূহ সিলেট জেলার সকল সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন। একই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধরণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। একই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধরণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উক্ত গণশুনানিতে দুদকের তফসিল ভুক্ত ৭৩ টি অভিযোগের শুনানি হয়। যার মধ্যে ৩ টি অভিযোগ অনুসন্ধানে নেয়া হয়, ২৮ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয় এবং বাকি অভিযোগসমূহ প্রতিবেদন দাখিল সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে।
সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যাবোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই গণশুনানির মূল অভিপ্রায়।
এর আগে গণশুনানিতে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণের জন্য সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহব্যাপী মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, বুথ স্থাপন করে অভিযোগ সংগ্রহ, অভিযোগ বাক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুদকের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা হয়েছিল। উক্ত গণশুনানির বিষয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গণশুনানি সরাসরি সেবা দাতা কর্মকর্তা-কর্মচারী, সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিক এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, স্কাউট- বিএনসিসি সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
আ. দৈ./কাশেম