ব্যাটে মুশফিকুর রহিমের ঐতিহাসিক রেকর্ড, বল হাতে তাইজুল ইসলামের বিশ্বরেকর্ড-এই দুই কীর্তির আলোয় ঝলমল করা মিরপুর টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে ২১৭ রানের বড় জয় উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজে আইরিশদের ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা।
তবে মিরপুরে আয়ারল্যান্ড লড়াই করেছে বীরের মতো। চতুর্থ ইনিংসে স্বাগতিকদের ভোগান্তি চরমে তুলেছিল তাদের দৃঢ়তা। এর আগে কোনো সফরকারী দল বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ১০০ ওভার টিকতে পারেনি, ২৫০ রান তো দূরের কথা। এবার সেই দুটোই করে দেখিয়েছে আইরিশরা। শেষ দিনে প্রায় অসহায় হয়ে পড়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
চার উইকেট হাতে নিয়ে পঞ্চম দিনের শুরু করেও আয়ারল্যান্ড দারুণ প্রতিরোধ গড়ে ৫৯.৩ ওভার ব্যাটিং করে। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস থামে ১১৩.৩ ওভারে ২৯১ রানে। আগের রেকর্ড ভেঙে তারা গড়েছে মিরপুরে সফরকারী দলের চতুর্থ ইনিংসের সর্বোচ্চ রানের ও সর্বোচ্চ ওভারের নতুন ইতিহাস।
এরই মধ্যে আগের দিন সাকিব আল হাসানকে টপকে দেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটশিকারি হয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। শেষ দিনে আরেকটি উইকেট নিয়ে তিনি হয়ে যান বাংলাদেশের প্রথম ২৫০ উইকেটধারী বোলার।
মাত্র ৫৭ টেস্টে এই মাইলফলক স্পর্শ করে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ২৫০ উইকেটের বিশ্বরেকর্ডে রাঙ্গনা হেরাথের পাশে জায়গা করে নেন তিনি।
তাইজুল দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন চারটি করে মোট ৮ উইকেট। আর শেষ ইনিংসে দুর্দান্ত চার উইকেট শিকার করে নজর কেড়েছেন হাসান মুরাদও। আয়ারল্যান্ডের নবম উইকেট জুটি যখন বাংলাদেশের জন্য বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছিল, তখন টানা দুই বলে শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন এই তরুণ লেগস্পিনার।
৬ উইকেটে ১৭৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা আইরিশদের ক্যাম্ফার ও ম্যাকব্রাইন দীর্ঘ সময় বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রাখেন। ২০৫ বল টিকিয়ে রাখা জুটিতে ক্যাম্ফার করেন মাত্র ৩ রান (৫২ বলে)। ম্যাকব্রাইনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙার পাশাপাশি তাইজুল স্পর্শ করেন ২৫০ উইকেটের নতুন দিগন্ত।
পরের জুটিতে ক্যাম্ফারের সঙ্গে জর্ডান নিল খেলেন কিছু ঝলমলে শট। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের নিখুঁত ডেলিভারিতে ভাঙে ৪৮ রানের জুটি—৫ চার ও এক ছক্কায় ৩০ করে আউট হন নিল।
এরপর ক্যাম্ফার ও গ্যাভিন হোয়ে তুলে ধরেন ম্যাচের সবচেয়ে লম্বা প্রতিরোধ। অসাধারণ ধৈর্য ও মনোবলে তারা কাটিয়ে দেন একের পর এক ওভার। শেষ পর্যন্ত হাসান মুরাদের দুর্দান্ত বল হোয়েকে (৩৭) এলবিডব্লিউ করলে ভাঙে ৫৪ রানের জুটি। পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান ম্যাথু হামফ্রিজ। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জয় উদযাপন করে বাংলাদেশ।
ক্যাম্ফার অপরাজিত থাকেন ৭১ রানে, ২৫৯ বল লড়ে-মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ বল খেলার নতুন রেকর্ড। এই তালিকায় ২০০৮ সালে সাকিব আল হাসানের ২১২ বলের রেকর্ডও ভেঙে দেন তিনি।
এর আগে আয়ারল্যান্ডের হয়ে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডও ছিল ক্যাম্ফারের দখলে (২২৯), এবার সেটিও ছাড়িয়ে গেলেন।
তবু শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে পারেনি আয়ারল্যান্ড, কিন্তু লড়াইটা ছিল প্রেরণাদায়ক।
অন্যদিকে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের হয়ে মুশফিকুর রহিম ছিলেন উজ্জ্বল। শততম টেস্টে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৫৩ রান করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি–ফিফটির কীর্তি এর আগে গড়েছিলেন কেবল রিকি পন্টিং।
এর আগে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৭৬ রান করে। জবাবে ২৬৫ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৯৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করলে আইরিশদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫০৯।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ৪৭৬ ও ২৯৭/৪ ডিক্লেয়ার (মমিনুল ৮৭, শাদমান ৭৮, হোয়ি ২-৮৪)
আয়ারল্যান্ড ২৬৫ ও ২৯১ (ক্যামফার ৭১, টেক্টর ৫০, মুরাদ ৪-৪৪, তাইজুল ৪-১০৪)
বাংলাদেশ ২১৭ রানে জয়ী।