শেখ হাসিনাসহ দণ্ডিত আসামিদের বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার না করার ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির বরাত দিয়ে দণ্ডিত আসামিদের বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারে উদ্বেগ জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়েছে, জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) একটি জরুরি সতর্কতা জারি করে দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ‘অপব্যবহার’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, পলাতক ও আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের প্রচারিত মিথ্যা ও উসকানিমূলক তথ্য-বিবৃতিগুলো দেশের সার্বিক নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা ও বহু-আকাঙ্ক্ষিত সামাজিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করছে। এই কার্যকলাপগুলো সহিংসতা ও বৃহত্তর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূল কারণ।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর রায়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত ও বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি গুরুতর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত বলে জানান।
এনসিএসএ বলেছে, বাংলাদেশের আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামির বক্তব্য ও বিবৃতি ক্রমাগত ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার হওয়া বিচার বিভাগের প্রতি অবমাননা এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির শামিল। এসব বক্তব্যে সরাসরি ‘কল ফর ভায়োলেন্স’ (সহিংসতার আহ্বান) রয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা, অগ্নিসন্ত্রাস এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা ছড়াচ্ছে।
এনসিএসএ এই ধরনের অপরাধ দমনে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর কঠোর প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, অধ্যাদেশের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ (ধারা ৪) : এই আইনের বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি দেশের বাইরে থেকেও এই অধ্যাদেশের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তবে সেই অপরাধটি বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে বলেই গণ্য হবে এবং উক্ত বিধানাবলি সেভাবেই প্রযোজ্য হবে। এটি সাইবার অপরাধ দমনে সরকারের কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।
বিদ্বেষমূলক তথ্য প্রচারের অপরাধ (ধারা ২৬) : এই ধারার অধীনে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা ছদ্ম পরিচয়ে এমন কোনো কিছু সাইবার স্পেসে প্রকাশ বা প্রচার করেন, যা ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং যা সহিংসতা তৈরি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নির্দেশনা দেয়; তবে তা সরাসরি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা সম্পর্কে এনসিএসএ জানিয়েছে, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বিশ্বাস করার কারণ থাকলে, তারা ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দেশের অখণ্ডতা বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করলে সেগুলোকে অবিলম্বে অপসারণ বা স্থায়ীভাবে ব্লক করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
এ ক্ষেত্রে এনসিএসএ মহাপরিচালকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দ্রুত অনুরোধ জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। মিডিয়া আউটলেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের তাই কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে যে আদালতের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে