ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক বক্তব্য বন্ধে নির্বাচন আচরণবিধিতে স্পষ্ট নির্দেশনা যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ৬৪ জেলার ডিসি ও আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারদের মতবিনিময় সভায় এই প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুইজন ডিসি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিরোধ ও উত্তেজনা বেড়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো একে ব্যবহার করছে প্রচারমঞ্চ হিসেবে। এ কারণে সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিতে রাজনৈতিক বক্তব্য নিষিদ্ধের স্পষ্ট বিধান থাকা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “ডিসিদের প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি এখন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।”
তিনি আরও বলেন, ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দেওয়ার সময় রাজনৈতিক বক্তব্য নিষিদ্ধের শর্ত সংযুক্ত করা উচিত। কারণ ধর্মীয় আয়োজনের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা ঢুকলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা তৈরি করে।
এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী রাজনৈতিক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় থাকেন, অথচ তারাই আবার নির্বাচনের দিন পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন-এ বিষয়টিকে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন কয়েকজন ডিসি।
রাজশাহী বিভাগের এক ডিসি বলেন, “এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পুরোপুরি সরকার বহন করে। নির্বাচনে তারা কেন্দ্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু যদি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের প্রকাশ্য সমর্থন থাকে, তাহলে কেন্দ্রে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।”
পূর্বে ঝিনাইদহের তৎকালীন ডিসি মনিরা বেগম এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সরকারি কর্মচারীদের মতো একটি আলাদা বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার মতে, এ ধরনের বিধিমালা থাকলে শিক্ষকরা অতিরিক্ত পেশা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো থেকে বিরত থাকবেন এবং পাঠদানে আরও মনোযোগী হবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল উপস্থিত ছিলেন। সভায় জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে ডিসিদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যও প্রদান করা হয়।