ফেসবুকের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এক মিথ্যা সম্পর্ক এখন এক যুবকের জীবনে দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার শরাশাক গ্রামের মৃত তায়েজ উদ্দিন তালুকদারের ছোট মেয়ে তহুরা তালুকদার তন্বী নামে এক নারী নানা কৌশলে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তাদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, তন্বী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে নিজেকে কখনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী, আবার কখনো মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে উপস্থাপন করতেন। একাধিক নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালী ও বিত্তশালী ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রথমে কুমারী পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেন, এরপর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে গোপনে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন এবং পরে সেগুলোকে ব্ল্যাকমেইলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নেন।
সূত্র জানায়, তন্বী একা নন — তার চার বোন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন তালুকদার এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত। তায়েজ উদ্দিন তালুকদারের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা একজোট হয়ে এই প্রতারণা ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তন্বীর পরিবার শরাশাক গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও, ফেসবুকে তিনি রাজশাহী শহরের ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি দুইটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিজের পরিচয় গোপন রাখেন তিনি।
একজন ভুক্তভোগী জানান, তন্বীর সঙ্গে তার পরিচয় হয় ফেসবুকে। দীর্ঘ সাত মাসের প্রেমের সম্পর্কের পর তন্বী নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এক পর্যায়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে উভয় পরিবারের উপস্থিতিতে তাদের মধ্যে প্রতীকী বিয়েও সম্পন্ন হয়। বিয়ের পরপরই তন্বী ও তার পরিবার ওই যুবকের কাছে দুই কোটি টাকা দাবি করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হন।
তদন্তে জানা গেছে, তন্বী ও তার পরিবারের সদস্যরা এর আগেও একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন। ভুয়া পরিচয়, প্রেমের সম্পর্ক ও ব্ল্যাকমেইলিং — এই তিন ধাপেই তারা প্রতারণার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসছেন।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তন্বী অত্যন্ত চতুর ও মোবাইল ব্যবহারে পারদর্শী। তিনি একাধিক ডিভাইস ব্যবহার করে নতুন নতুন আইডি খুলে দ্রুত নতুন টার্গেট খুঁজে বের করেন।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে একাধিক ব্যক্তি স্থানীয় প্রশাসন ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত তন্বী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।