মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫,
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
জাতীয়
সারাদেশে মন্ডপ বেড়েছে হাজারেরও বেশি
শারদীয় দুর্গোৎসবের সাজ সাজ রব
তানজিকা ইতি
Publish: Saturday, 20 September, 2025, 9:52 PM  (ভিজিট : 79)

কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মোৎসব এটি। বাংলার ঘরে ঘরে বেজে উঠবে ঢাক, ঢোল, শঙ্খ। এ উৎসব সার্বজনীন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর দেশে পূজামন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে এক হাজারের বেশি। 

প্রায় ৩৩ হাজার মণ্ডপে চলছে সাজসাজ রব। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা প্রস্তুতি। হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে চলছে পূজা-পার্বনের প্রস্তুতি। বিপনি বিতানগুলোতে পড়েছে কেনাকাটার ধুম। কাশারী, শাখারী, ময়রা, মৃৎশিল্পী সবাই পার করছেন ব্যস্ত সময়।

পূজা-মন্ডপের নিরাপত্তা :২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় এ উৎসব। প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়ে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে এবারের দুর্গাপূজায় বিগত বছরগুলোর চেয়ে এক হাজারেরও বেশি পূজামন্ডপ বেড়েছে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে উৎসবের আয়োজন চলছে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পূজা আসায় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন এদিকে।

 সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবকে কেন্দ্র করে মণ্ডপগুলোর প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রায় ৩৩ হাজার পূজা মণ্ডপে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই পূজা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩ লাখ আনসার সদস্যসহ পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া, প্রতিটি মন্দিরের জন্য অ্যাপ তৈরির কাজও চলছে। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষনা দেয়া হয়েছে যে, তাদের নেতাকর্মীরাও প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

পূজার কেনাকাটা : রঙিন সাজপোশাকে বৈচিত্র্য ছড়াবে শারদীয় দুর্গোৎসব। লাল-সাদার ঐতিহ্যমন্ডিত পোশাকের পাশাপাশি এবার থাকছে নানা রঙ ও ফ্যাশনের বাহারি পোষাক । আধুনিক প্রজন্ম লাল-সাদার গন্ডি পেরিয়ে হলুদ, বাসন্তী, আকাশি বা নীল রঙের প্রাণবন্ত হালের সব জামা-কাপড় কিনছে। শাড়ি আর দুর্গাপূজার সম্পর্ক যেন চিরন্তন। কাতান, সিল্ক, তাঁত কিংবা জামদানির মতো শাড়িগুলো পূজার কেনাকাটায় এগিয়ে রয়েছে। অনেকে ইন্দো-ওয়েস্টার্ন গাউন, কুর্তি কিংবা লং ফ্রকও কিনছেন। 

অলংকারেও এসেছে বৈচিত্র্য। সোনার গহনা এখনো পূজার সাজে রাজকীয়তা আনে, তবে তরুণ প্রজন্ম অক্সিডাইজড সিলভার বা টেরাকোটা জুয়েলারির দিকেও ঝুঁকছে। পুরুষদের সাজপোশাকেও নতুনত্বের ছাপ লেগেছে। পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামার পাশাপাশি তাঁত কিংবা কটনের কুর্তা চলছে বেশি। আর শিশুরা তো উৎসবের আসল প্রাণ। তাদের জন্য পূজার কেনাকাটায় এগিয়ে রঙিন ফ্রক, টপস, জিনস্ কিংবা কার্টুন প্রিন্টের কাপড়। 
নগরীর বিপনি বিতানগুলোতে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো। এদিকে পূজা উপলক্ষ্যে কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিশেষ কালেকশন নিয়ে এসেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। ইনফিনিটি, লা রিভ, আড়ং, ইয়োলো, বিশ্বরঙ, আঞ্জনস্, জেন্টাল পার্ক, প্লাস পয়েন্ট, দেশি দশসহ  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে নতুন কালেকশন। কাপড়ের মার্কেট ও শোরুমগুলোতে নারীদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রংয়ের থ্রি-পিস, জামদানি শাড়ি, কাতান শাড়ি, লেহেঙ্গা ও তাঁতের শাড়ি। ছেলেদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের ধুতি, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, টি- শার্ট, প্যান্ট। তাছাড়াও জুতার দোকাগুলোতেও ভিড় বাড়ছে।

বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে দেখা যায়, নিচ তলায় শিশুদের দোকানগুলোতে বেশ ভিড়। মার্কেটে কেউ শাড়ি কিনছে, কেউ পাঞ্জাবি, কেউ আবার কিনছে জুতা। প্রায় সবার হাতেই ছিল শপিং ব্যাগ। পলি সরকার, পুরান ঢাকার নারিন্দা থেকে এসছেন বসুন্ধরা শপিং মলে পরিবারের জন্য পূজার কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, নিজের জন্য একটা শাড়ি ও মেয়ের জন্য টপস আর থ্রি-পিস এবং ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। এখন শ্বশুর-শাশুড়ি ও বাবা-মা  এবং আত্মীয় স্বজনের জন্য কেনাকাটা করতে হবে। আরেক ক্রেতা ডা. সৌরভ সরকার থাকেন রাজধানীর কলাবাগানে। এবার পূজায় গ্রামের বাড়ি পাবনায় যাবেন। তাই বাড়ির সবার জন্য পোশাক কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও জুতা কেনা হয়েছে। এখনও আত্মীয় স্বজনের জন্য পোশাক কিনতে হবে।’ প্লাস পয়েন্টের বিক্রেতা আজিজুল হাকিম বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার একটু ভালো বিক্রি হচ্ছে।’

বসুন্ধরা শপিং মলের আড়ং-এর  সেলস ম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। ক্রেতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ পূজা উপলক্ষে কিনতে এসেছে। এদিকে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, মৌচাক, খিলগাঁও তালতলা মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, চাঁদনী চক ও গাউছিয়ার বেশিরভাগ শাড়ির দোকানদার ব্যস্ত সময় পার করছেন। দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের পূজার বাজারে নারীদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের চাহিদা বেশি। কাতান, জর্জেট, সিল্ক ও এমব্রয়ডারি দিয়ে কাজ করা শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। কদর রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত ও জামদানি শাড়িরও।

নিউমার্কেটের ইমিটেশনের গয়নার দোকানগুলোতেও চলছে বিক্রির ধুম। নারীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন চুড়ি, গলার হার, আংটিসহ নানা রকম অলঙ্কার। পোশাকের পাশাপাশি মেয়েদের জুয়েলারি, সিঁদুর, চুড়িসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানিরা।
পূজা সামনে রেখে ডিজিটাল বাজারগুলোও সরব হয়েছে। অনলাইনে চলছে নানা পোশাকের প্রচারণা, সঙ্গে বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অনেকে অনলাইনে ও অফলাইন দুভাবেই বিক্রি করছে। কোনো কোনো পেইজ দিচ্ছে কাস্টমাইজড সুবিধা।

পূজার প্রসাধনী : পূজার প্রসাধনী বলতে মূলত দেবী মূর্তির সাজসজ্জা ও পূজাকালীন ভক্তদের সাজবাজকে বোঝানো হয়। চন্দন, আলতা, মেহেদী, কাজল, লিপস্টিক, সিঁদুর, শাঁখা-পলা, মালা শোভা পায় তরুনীদের সাজে।  এছাড়া পূজার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে বিউটি পার্লারগুলো। ইতিমধ্যেই ভিড় বেড়েছে। বিভিন্ন বিউটি পার্লারে এই সময়ে বিশেষ ছাড় ও অফার দেওয়া হয়। 

মেলা আর মিষ্টান্ন : পূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন চলছে। বিভিন্ন ধরনের নকশাখচিত মাটির জিনিস, নিত্য প্রয়োজনীয় কাঠের সামগ্রী, দেশীয় হস্তশিল্পের পসরা সাজিয়ে বসবেন বিক্রেতারা। কলস, হাঁড়ি-পাতিল, প্রদীপ, ধূপদানি, চন্দন, ফুল, কর্পূর ও আগরবাতির কারিগররা ব্যস্ত এখন। ঐতিহ্যবাহী সব মিষ্টি-মিষ্টান্ন ও খাবার দাবারের এক বিশাল সম্ভার থাকে পূজাকে ঘিরে। মুড়ি-মুড়কি, কদমা, মটকা, মোয়া, নারকেলের নাড়ু, ক্ষীর, মালপোয়া, দুধপুলি, পদ্মচিনি, বাতাসা, ছানার সন্দেশ, রসগোল্লা, দই এবং গরম জিলিপির কারিগররা ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া পূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে সুগন্ধি চালের ভাত, খিচুড়ি, লুচি-লাবড়া, পায়েস, চাটনি, আচার, মাছ-মাংসের বাজার প্রায় শেষ । 

বাঙালির পূজার ভোজ ইলিশ ছাড়া যেন  জমেই না। কথায় আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। বাংলা ও বাঙালির মাছের প্রতি ভালবাসা সর্বজনবিদিত। পূজা ও ইলিশের মধ্যে একটি বন্ধন আদিকাল থেকে। যেখানে দুর্গাপূজা ও স্বরস্বতী পূজার মতো উৎসবগুলোতে ইলিশ মাছকে ঐতিহ্য ও রীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এবারের পূজায় বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে ইলিশ পাঠানো হয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারতেও। বাংলাদেশ সরকার পূজার উপহার হিসেবে ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। ইলিশের দাম এ বছর তুলনামূলক চড়া। তবুও পূজা বলে কথা। যে যতটুকু পারে সংগ্রহ করেছে।
 
এবারের পূজার ছুটি : আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও কলেজে লম্বা ছুটি মিলতে যাচ্ছে। পূজার শুরুতে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা টানা ১২ দিন ছুটিতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছুটি শুরু হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে। এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি দপ্তরগুলোতেও টানা চার দিনের ছুটি থাকবে। আগামী ১ ও ২ অক্টোবর পূজার ছুটির সঙ্গে ৩ ও ৪ অক্টোবর সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত হয়েছে। সরকারি কর্মচারীরাও দীর্ঘ ছুটি কাটানোর সুযোগ পাবেন।

এ ছুটিতে কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নেত্রকোনার বিরিসিরি, শেরপুরের গজনি পাহাড়ি এলাকায় চলছে নানা আয়োজন। এছাড়া দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকায়ও ব্যপক জনসমাগম ঘটবে। হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষও ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

আ.দৈ/আরএস


   বিষয়:  শারদীয়   দুর্গোৎসবের   সাজ   সাজ   রব  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের বাড়ি ভাংচুর
গাংনীতে কাথুলী সীমান্তে আটক ২৪ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
কিবরিয়া হত্যায় ১৩ জনকে আসামি করে মামলা
গাংনীতে শিক্ষকের প্রেমে ব্যর্থ ছাত্রীর গোপন ভিডিও ভাইরাল
কুড়িলে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

হাসিনার রায়ের পর ডাকসু এজিএস শেয়ার করলেন কাদের মোল্লার চিঠি
আর মেগা প্রজেক্ট থাকবে না, স্কিল ডেভেলপমেন্টকে গরুত্ব দেবে বিএনপি : আমীর খসরু
গাংনীতে উপজেলা বিএনপির মিছিলের নগরী
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর ভারতের প্রতিক্রিয়া
এবার শাহবাগে কার্যকর হলো শেখ হাসিনার প্রতীকী ফাঁসি
জাতীয়- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাসুদ আলম
প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝