নারায়ণগঞ্জ জেলার নিবন্ধিত গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসন এবং ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় এক মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এক লাখ আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট এবং দুই হাজার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের তথ্যমতে, এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে নিবন্ধিত গর্ভবতী নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ২৬৭ জন। তবে প্রায় ছয় মাস ধরে সরকারি পর্যায়ে আয়রন ট্যাবলেট সরবরাহ বন্ধ থাকায় এরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের আবেদনের পর জেলা প্রশাসক দ্রুত ব্যবস্থা নেন এবং জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার আয়রন ও ৫০ হাজার ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট সরবরাহ করেন।
এ প্রসঙ্গে এক গর্ভবতী নারী মনিকা বেগম বলেন,“একাধিকবার চেয়েও আমি আয়রন ট্যাবলেট পাইনি। এর অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং গত জুলাইয়ে আমার সিজার অপারেশন হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড না খাওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।”
ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী সৈয়দা শাহনাজ সীমা জানিয়েছেন, প্রসূতি মায়েদের সেবা দেওয়ার জন্য আমরা যখন ঘরে ঘরে যাই তখন দেখতে পাই আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাবে প্রসূতি নারীরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে।
নুপুর নামে একজনকে হাসপাতালে রেফার করতে হয়েছিল আমাকে। পরে তার গর্ভধারণের পাঁচ মাসের মাথায় এমআর করাতে হয় ডাক্তারদের। এভাবে নুপুরের মতো অনেক প্রসূতি নারীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে শুধুমাত্র আয়রন ট্যাবলেট না খেতে পারায়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা তো সাধারণত দরিদ্র প্রসূতি নারীদের সেবা দিই। তারা বাইরে ডাক্তারও দেখাতে পারেন না, ওষুধ কিনে খাওয়া তো দূরের কথা।”দরিদ্র মায়েরা ওষুধ কিনে খেতে পারেন না। এই সরবরাহে অনেক মায়ের জীবন বাঁচবে।
একই অনুষ্ঠানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী দুই হাজার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট সরবরাহ করা হয়। এর আগে গত জুলাই মাসেও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একই হাসপাতালে দুই হাজার কিট সরবরাহ করা হয়েছিল।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার বলেন,“ডিসি মহোদয়ের কাছে কোনো আবেদন করলে তিনি তাৎক্ষণিক সাড়া দেন। এবারও ডেঙ্গু কিট দ্রুত সরবরাহ করেছেন। তাঁর নির্দেশে এই কিট রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ব্যবহার করা হবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, গত ১৯ আগস্ট আমাদের কাছে দুটি আবেদন আসে।
একটি আবেদনে নারায়ণগঞ্জের নিবন্ধিত ১৫ হাজার ২৬৭ জন গর্ভবতী মায়েদের আয়রন ট্যাবলেট সংকটের কথা বলা হয়। এমনিতেই আমাদের দেশের মায়েদের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আমাদের মায়েরা যদি সুস্থ বাচ্চা আনতে পারেন তবে আমরা সুস্থ জাতি গঠন করতে পারব। আর তাই আমরা এই আবেদনের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে ভালো কোয়ালিটির ওষুধ সরবরাহ করার চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, আরেকটি আবেদনে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সুপার আমাদের কাছে কিটের আবেদন করেছিলেন। এর আগেও আমরা ডেঙ্গু কিট দিয়েছিলাম। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ডেঙ্গু টেস্ট করার জন্য যে পরিমাণ কিটের চাহিদা রয়েছে সে পরিমাণ নেই।
আমরা চাই না যেন কেউ চিকিৎসার অভাবে অকালেই প্রাণ হারান। আর তাই আমরা ডেঙ্গু কিট সরবরাহ করার চেষ্টা করি।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, একজন সুস্থ মা-ই একটি সুস্থ জাতি উপহার দিতে পারেন। তাই আমরা প্রতিটি মায়ের সুস্থতা প্রত্যাশা করি। তাদের সুস্থতার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।
“শুধু গর্ভবতী মায়েদের নয়, অনাগত শিশুর সুস্থ জীবনের জন্যও এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একজন মা আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড না খেলে রক্তশূন্যতায় ভুগতে পারেন, যা প্রসব জটিলতা ও শিশুর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে দ্রুতই এমআর মেশিন ও একটি ভ্রাম্যমাণ এক্সরে মেশিন সরবরাহ করব।
“আমরা চাই না কোনো রোগী চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারান। তাই নাগরিক সেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় । জেলা প্রশাসক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস ডিপার্টমেন্টে আমার ক্লাসমেট ছিল।
আ. দৈ./কাশেম