ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম ক্রমেই বাড়ছে। সিন্ডিকেটটি এতোটাই ক্ষমতাবান যে,তাদের মতের বাইরে ডিএনসিসির একাধিক বিভাগীয় প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামতের কোন গুরুত্ব নেই বললেই চলে। অত্যন্ত দাপটের সাথে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আইন,বিধি ও রেওয়াজ অমান্য করে কথিত উন্নয়ন, সংস্কা, কেনা কাটা এবং লোকদেখানো বিভিন্ন প্রকপের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আলোচনায় রয়েছে।
ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, প্রশাসকের সিন্ডিকেটকের সাথে যুক্ত রয়েছে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর সাবেক মেয়র মো.আতিকুল ইসলামের রেখে যাওয়া কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তাদের বড় একটা অংশ সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সমর্থণ করেন। সম্প্রতি বিএনপি'র পরিচয়দানকারী প্রভাবশালী দুই/চার জন কর্মকর্তা এবং কর্মচারী আর্থিক সুবিধার লোভে এই সিন্ডিকেটের সাথে গোপনে লিয়াজো রাখছেন।
প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দায়িত্ব গ্রহণের পরই ডিএনসিসিতে ‘ অফির্সাস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে কর্মকর্তাদের একটি সংগঠন তৈরি করা হয়। এই সংগঠনটির এখনো রেজিষ্ট্রেশন হয়নি নেই। এই সংগঠনের নেতৃত্বদানকারীদের অধিকাংশ সদস্যই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা সাবেক মেয়র মো.আতিকুল ইসলামের আমলের কোটি কোটি টাকা লোপাটের সাথে জড়িত ছিলেন। মেয়র সেলের সিন্ডিকেটের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ হিসেবে বেশ পরিচিতি রয়েছে তাদের।
সূত্র মতে, ডিএনসিসির প্রশাসকের নিকটতম আত্মীয় জনৈক প্রভাবশালী লিটন সাহেবের নিয়োগকৃত মাহবুবুর রহমান ওরফে দালাল মাহবুবের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেটে যুক্ত রয়েছেন অফিসার্স অ্যাসেসিয়েশনের শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়জন কর্মকর্তা । যারফলে এই প্রতিষ্ঠানটি আজ দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
ডিএনসিসিতে নিয়োগ বদলি, পোস্টিং, পদোন্নতি, নগরীতে উন্নয়ন ও সংস্কার মূলক কার্যক্রম, কোটি কোটি টাকার কেনা কাটা এবং বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ ও খরচ করা হচ্ছে। আরো হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য নতুন বেশ কয়টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব কার্যক্রমে প্রচলিত আইন ও বিধি অনুসরণ করা হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, এই সিন্ডিকেটটি পরিকল্পিতভাবে জাতীয়তাবাদী দল' বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী এবং কিছু নিরীহ কর্মকর্তাদের নানাভাবে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে। তাদেরকে নানা কৌশলে কোনঠাসা করে রাখার জন্য দফায় দফায় হয়রানীমূলক বদলি করা হচ্ছে। অপরদিকে ফ্যাসিস্ট সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের দোসর এবং অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়জনকে ইতোমধ্যে সুবিধাজনক দপ্তরে 'প্রাইজ পোস্টিং' দেওয়া হয়েছে। বাকীদেরও প্রাইজ পোসিং দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।
সূত্রমতে, ডিএনসিসির অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আগামী ২ সেপ্টেম্বর এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার নামে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরএই অনুষ্ঠানকে সফল করতে প্রশাসক ৫ লাখ টাকার সহায়তা দিয়েছেন বলে জানাযায়। এছাড়াও অনুষ্ঠান উপলক্ষে কর্মরত প্রত্যেক কর্মকর্তার কাছ থেকে বিনা রশিদে নগদ এক হাজার টাকা করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। যারা চাঁদা দিবে তারা নেকনজরে থাকবেন । আর যারা এক হাজার টাকা করে চাঁদা দেবে না, তাদের জন্য পৃথক একটা তালিকা থাকবে।
চাঁদা নেয়ার বিষয়ে সংগঠনের সদস্য সচিব মো.শাহেদ জোহার এই প্রতিনিধিকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সংগঠনের সদস্য হিসেবে নির্ধারিত চাঁদা এক হাজার টাকা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সদস্যরা এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে রেজিস্টেশন করবেন। যারা সদস্য হতে আগ্রহী কেবলমাত্র তারাই চাঁদা দেবেন। এখানো কাউকে জোর করে সদস্য করা হচ্ছে না। এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই অযৌক্তিক। সংগঠন তো সদস্যদের চাঁদাতেই পরিচালিত হবে ।
এদিকে ডিএনসিসিতে কর্মরত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সমর্থিত , নানা বৈষম্যের শিকার এবং প্রতিবাদী কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন । তারা‘জাতীয়তাবাদী অফিসার্স ফোরাম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিগগিরই ডিএনসিসিতে জাতীয়তাবাদী অফিসার্স ফোরামের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হচ্ছে।
এই ফোরামের টার্গেট, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সিন্ডিকেট থেকে ডিএনসিসিকে রক্ষা করা এবং কোটি কোটি টাকা লোপাট প্রতিরোধের পাশাপাশি নিরীহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ন্যায় সংগত অধিকার দাবী আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা। ডিএনসিসির মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করার পাশাপাশি জনগণের দ্রুত সেবা প্রদানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার।
আ. দৈ./ কাশেম