সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই আলোচনার কেন্দ্রে থাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত গমনের পর দেশের রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন শুরু হয়। সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক রাজনীতিবিদ ও আমলা তখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। তবে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের অবস্থান নিয়ে ছিল দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা।
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত খায়রুল হক তার পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ১৩ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন এবং আত্মগোপনে চলে যান। এরপর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, রায় জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ।
বিশেষভাবে বিতর্কিত ছিল তার নেতৃত্বে দেওয়া একতরফা রায়, যার মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, খায়রুল হক, মোজাম্মেল হোসেন ও এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে কোনো শুনানি ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় এবং খায়রুল হকের অন্য কিছু সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার প্রশ্নে গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটানোতেও ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, যা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় তৈরি করে।
এছাড়া খায়রুল হক স্বাধীনতার ঘোষক প্রসঙ্গে দেওয়া এক রায়েও বিতর্কের জন্ম দেন, যেখানে বলা হয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন। এই রায় রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এবং বিচার বিভাগের রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে।
তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংবিধানের রায় জালিয়াতির অভিযোগে ঢাকার শাহবাগ ও ফতুল্লা থানায় মামলা, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের দায়ের করা মামলায় প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ, এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ-সমাবেশে তার গ্রেফতার ও বিচারের দাবি।
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে। রাজনীতিক ও বিচার ব্যবস্থার সংযোগে তার ভূমিকা নতুন করে বিচার বিভাগে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার প্রশ্নও সামনে নিয়ে এসেছে।