কয়েক মাসের মধ্যে একীভূত হচ্ছে গ্লোবাল, ইউনিয়নসহ শরিয়াভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংক মিলে হবে শরিয়াভিত্তিক একটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি তুলেছেন এক্সিম ব্যাংকের পাশাপাশি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও।
তারা বলছে, একীভূত নয়, একক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে চায় তারা। এব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আপত্তি জানিয়েছে এই দুই ব্যাংক। তাদের সক্ষমতা ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালিত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা।
জানা গেছে, দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে গত ১৫ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা হয়তো ইসলামী ঘরনার কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করবো। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। কাজই হলো ব্যাংকগুলো যদি ধ্বংসের দিকে যায় তাহলে ধ্বংসের আগেই তাদের রক্ষা করতে হবে। যখন যেখানে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটা করবে।’
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘পাঁচটা ব্যাংক একীভূত করতে গিয়ে তিনি এক্সিম ব্যাংক কেন এখানে ঢুকাচ্ছেন, এটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। বাকি চারটি ব্যাংকের মোট ব্যবসা এক্সিম ব্যাংকের থেকে কম। সেটি বিশাল অঙ্কের টাকা। তাই এসব ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংককে কোন মানদণ্ডে একীভূত করা হচ্ছে এটি বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, কোন নিয়মে বা কোন পদ্ধতিতে একীভূত করা হবে; সেটি জানালে আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারতাম। সেখানে আমাদের কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে সংশোধন করতাম, না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই সরাসরি মেনে নিতাম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য, কয়েক মাসের মধ্যে একীভূত হতে যাচ্ছে এক্সিম, গ্লোবাল, ইউনিয়ন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর বর্তমান কার্যক্রমে, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে প্রবাসী আয় দেশে আনার ক্ষেত্রে এই দুই ব্যাংকের বেশ অবদান রয়েছে। তবে পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ খুবই বেশি। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে ৯৩ শতাংশ, গ্লোবাল ব্যাংকের ৯৪ ও ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ শতাংশ। আর এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৮ শতাংশ ও ৫৮ শতাংশ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউজ্জামান বলেন, ‘একীভূত হতে কোনো প্রকার আগ্রহ নেই। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে। আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব রয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটির গ্রাহকের আস্থা রয়েছে। ফলে আমানত নিয়ে কোনো প্রকার চিন্তা নেই। এই ব্যাংকের অনেক শাখা ও উপশাখা রয়েছে। তাই প্রবাসীদের আয় এই ব্যাংক থেকে বেশি আসে। পাইভেট ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো গতবছরও।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটু সুযোগ পেলেই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবো আমরা। কারণ এই ব্যাংকে এখন ভালো একটি পর্ষদ রয়েছে। যারা সবাই দক্ষ ব্যাংকার। এছাড়া সবাই সুশাসনের জন্য কাজ করছে। ফলে একীভূতের চেয়ে একক ব্যাংক হিসেবে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো বলে বিশ্বাস রাখি।’
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, সেটি অবশ্যই জানাতে হবে। ব্যাংকিং রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্সের ধারা অনুযায়ীই কাজ করতে হবে। আইনগতভাবে সেই সুযোগটি কি বা রেজ্যুলেশন প্ল্যানটি অবশ্যই ব্যাংকে আগে জানাতে হবে।
এদিকে, একীভূত ব্যাংকের গ্রাহকদের লেনদেনে যেমন কোনো সমস্যা হবে না, তেমনি কর্মীরা চাকরি হারাবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাটের ভয়াবহতা। যতই দিন যাচ্ছে নেতিবাচক প্রভাব ততই প্রকট আকারে দৃশ্যমান হচ্ছে। ঋণের নামে লুটপাট ও সেই টাকা পাচার করার কারণে ব্যাংক খাত প্রবল তারল্য সংকটে পড়েছে।
র/আ