এই ছবিটি মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের সমর্থনে নগর ভবনে শোডাউনের দৃশ্য
প্রচন্ড আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটিরে সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কারণ বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের সমর্থিত ডিএসসিসির কর্মচারীদের দুই গ্রুপ আবার মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ৫ আগষ্টের পর হঠাৎ নেতা বনে যাওয়া আরিফ চৌধুরীর কতিপয় সহযোগি আরিফুজ্জামান প্রিন্স গ্রুপের সমর্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোরপূর্বক নিজস্ব কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই জাতীয় একাধিক ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে দক্ষিণ নগর ভবনে।
ইতোমধ্যে গত ২২ জুন সরকার ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মো. জহিরুল ইসলামকে (যুগ্ম সচিব) নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমানের স্থলা ভিসিক্ত হবেন।
সূত্র মতে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থনে অসহযোগ আন্দোলনের ৪০দিনের মাথায় আজ সোমবার (২৩জুন) নাগরিক সেবা পুনরায় চালুর জন্য নগর ভবনের কয়েকটি দপ্তরের তালা খোলা হয়েছে। কিন্তু তালা খোলা হলেও অধিকাংশ দপ্তরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখা যায়নি।
আজ নগর ভবনে ডিএসসিসির জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে কতিপয় বিতর্কিত কর্মচারী হঠাৎ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থন আদায়ের পাশাপাশি আধিপত্য বজায় রাখতে আরো ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা আজ সোমবার অফিস খোলার প্রথম দিনই নগর ভবনে শোডাউন করেন। এক পর্যায়ে শ্রমিক দলের অপর অংশের নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্স গ্রুপের কর্মচারীদেরকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নগর ভবন থেকে বের করে দেন। এই খবর মুহুর্তে ডিএসসিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে নতুন করে আতঙ্ক এবং ভীতি শুরু হয়।
সূত্র মতে, এর আগে গত ২৯ মে দুপুর সাড়ে ১২ টায় নগর ভবনে আধিপত্য বজায় রাখতে বিএনপির সমর্থিত কর্মচারীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ওইদিন নগর ভবনে ভাংচুর, প্রতিপক্ষের নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্সসহ ৫/৭ জনকে মারাত্নকভাবে আহত করা হয়। একই সঙ্গে আহতদের কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা কেড়ে নেয়ার অভিযোগে ডিএমপির শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। আরিফুজ্জামান প্রিন্সের লিখিত অভিযোগটি পরদিন ৩০ মে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে, মামলা নম্বর ৩৮।
গত ২৯ মে দুপুরে নগর ভবনে বিএনপির সমর্থিত কর্মচারীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের্ষ আহতদের ছবি এগুলো
এই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, পরিবহন বিভাগের তত্তাবধায়ক আরিফ চৌধুরী, মশক কর্মী মো. আসাদ মিয়া, পাম্প অপারেটর মনির হোসেন ওরফে জিব্বা মনির, বর্জ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারী মো.কাইয়ুম, সংস্থাপন শাখার পিয়ন মো. জসিম, রাজস্ব বিভাগের (আরএস) কর্মচারী রফিকুল ইসলাম, রাজস্ব বিভাগের পিয়ন মো. দিদার, সম্পত্তি বিভাগের পিয়ন কামাল হোসেন, পাম্প অপারেটর মো. জুয়েল ও হিসাব সহকারী সাইফুল।এছাড়া আরো অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, মামলায় অভিযুক্তরা ডিএসসিসিতে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন পরিচয় দিলেও তাদের রেজিষ্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন কর্তৃক বৈধ কোন কমিটি নেই। বিএনপি সমর্থিত কেন্দ্রীয় শ্রমিক দল কিংবা মহানগর শ্রমিক দলের অনুমোদন নেই। এছাড়া সরকারের রেজিষ্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়ন অফিসের পক্ষ থেকেও আরিফ চৌধুরী,বাবুদের কমিটির কোন অনুমোদন নেই। ফলে তারা সবকিছু করছেন, শ্রমিক দলের মিড লেভেলের দুই একজন নেতার মোখিক সমর্থনে। এতেই তাদের দাপটে ডিএসসিসিতে সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে নগর ভবন সহ ডিএসসিসিতে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক চাঁদাবাজি,দখলবাজি,নিয়োগ,বদলি ও সুবিধাজনক দপ্তরে পদায়ন বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেয়ার দাবিতে অসহযোগ অন্দোলনে বহিরাগতদের সাথে ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অতিউৎসাহী হয়ে গত ১৪ মে নগর ভবনে ৬৫টি তালা মেরেছে। ওইদিন থেকে নগরবাসীর সব ধরনের সেবা প্রদান বন্ধ রয়েছে। তবে সেবামূলক সরকারি এই প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে ব্যক্তির স্বার্থের আন্দোলন হিতের বিপরীত হয়েছে।
অবশেষে গত ২২ জুন দুপুর থেকে এই আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক বিতর্কিত আমলা মশিউর রহমানসহ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শুভাকাঙ্খিরা এখন আর মাঠে নেই। টানা ৪০ দিনের এই অসহযোগ অন্দোলনে ডিএসসিসি এবং নগরবাসীর যে পরিমান ক্ষতি করা হয়েছে, তা সহজে পুরন করার মতো নয় বলেছে ভোক্তভুগী নাগরিকরা।
গতকাল রোববার দুপুরে নগর ভবনে মশিউর রহমান এসে আন্দোলনরত লোকজনকে বলেন, নাগরিক সেবা চালু করতে হবে। সোমবার (২৩ জুন) থেকে নগর ভবনে প্রশাসক এবং প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরসহ সব প্রকৌশলীদের দপ্তর তালাবদ্ধ থাকবে। এছাড়া বাকি সব বিভাগ ও দপ্তরের তালা খোলা হবে।
মশিউর রহমান বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কর্মরত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তার দপ্তর, হিসাব ও অডিট বিভাগ, সমাজকল্যাণ বিভাগ, আইন বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, সম্পত্তি বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ, বিদ্যুৎ সার্কেল, যান্ত্রিক সার্কেল, সংস্থাপন শাখা, নিরাপত্তা শাখা, জনসংযোগ বিভাগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নিজ নিজ অফিসে কর্মরত থেকে তাদের ওপরে দায়িত্বসমূহ।
যেমন- জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ ওয়ারিশান সনদ, বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয়নপত্র, সব ধরনের পৌর ও বাজার কর আদায়, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন কার্যক্রম, ডেঙ্গু চিকনগুনিয়া ও করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম, সড়ক বাতি প্রজ্বালন সচল রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, সাবেক আমলা মশিউর রহমান ডিএসসিসিতে সেবা বন্ধ করা এবং সেবা চালু করার আদেশ দেওয়ার বৈধ কোন কর্তৃপক্ষ কিনা। তার কোন বৈধতা আছে কিনা। সরকারের নিয়োগকৃত প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।