পবিত্র ঈদুল আযহা'র ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহ মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম। একই বাসে আব্দুর রাজ্জাক ও রনি নামে ইবির দুই শিক্ষার্থী'সহ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হন।
প্রতিনিয়তই কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকে বলে থাকেন মরণ ফাঁদের আরেক নাম কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক। গতবছর সেপ্টেম্বরে একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মনির হোসেন ক্লাস শেষ করে সিএনজিতে বাড়ি ফেরার সময় ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি দুর্ঘটনায় মাথায় মারাত্মক জখম হয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া, চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বিত্তিপাড়ায় ইবি'র একটি শিক্ষার্থীবাহী বাস ধানক্ষেতে উল্টে পড়ে যায়। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরের নিহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে ইবি শিক্ষার্থীরা। এতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ, ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ পর্যন্ত মহাসড়ক সংস্করণ'সহ আরও কিছু দাবি করেন তারা। তবে এ সকল দাবির তেমন কোন কার্যকর বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার বলেন, ইবির যাতায়াত ব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী অব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক অমনোযোগের ফলে সৃষ্ট প্রাণঘাতী বিপর্যয় গভীরভাবে উদ্বেগজনক। প্রশাসনের এই গাফিলতি কেবল অবকাঠামোগত সংকট নয়, বরং এক প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার প্রতীক। অবিলম্বে নিরাপদ, টেকসই ও জবাবদিহিমূলক পরিবহন নীতিমালা প্রণয়ন সময়োপযোগী।
শিক্ষার্থীদের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রশাসনিক আন্তরিকতা ও কার্যকর উদ্যোগ এখন অপরিহার্য। বিগত বছর মনিরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত ৫ দফা দাবি সত্ত্বেও প্রশাসনিক অকার্যকারিতা ও প্রতিশ্রুতির প্রহসনে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটেনি। প্রশাসনকে অবিলম্বে জবাবদিহিমূলক কাঠামোর আওতায় এনে পূর্বঘোষিত দাবিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সংগঠিতভাবে সাংবিধানিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায়ে সোচ্চার ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যাতে আর কোনো প্রাণ এভাবে ঝরে না যায়।
সাদিয়া মাহমুদ মীম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এখন পর্যন্ত যতবারই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে, সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার দাবির বাস্তবায়ন আমাদের নজরে পড়েনি। প্রশাসনকে পুরাতন সকল দাবিসমূহ নতুনভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া রাস্তা সংস্করণ'সহ বিশ্ববিদ্যালয় মেইনগেটের সামনে স্পিডব্রেকার নতুনভাবে সংযোজন করতে হবে।
কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট গতি নির্ধারণ করে সেই গতির সীমা অতিক্রমকারী যানবাহনকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রাস্তা সংস্করণের দাবি বাস্তবায়ন না হলে সকল সাধারন শিক্ষার্থী আবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। আর একটি প্রাণ যেন না ঝরে, সেই উদ্যোগ প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে নিতে হবে।
এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ক্যাম্পাস খোলার পর উপাচার্য বরাবর নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ, মহাসড়ক সংস্করণ'সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান ও দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানাবো। তবে যদি এর ব্যাত্যয় ঘটে তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি ও পরবর্তীতে সড়ক অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি পালন করব। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস. এম. সুইট বলেন, আমাদের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বেহাল দশা এবং লোকাল বাস ও পরিবহনের অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে আর কত প্রাণ ঝড়লে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ প্রশাসনের টনক নড়বে! আমরা এর আগে গত প্রশাসনের সময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছি এবং সর্বশেষ কয়েক মাস আগেও মহাসড়ক অবরোধ করে আমাদের দাবিগুলো জানিয়ে এসেছি। এরপরও প্রশাসন কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
অনতিলম্বে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংস্কার হওয়া এবং সকল পরিবহনের নিয়ন্ত্রিত গতি আনতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ফুটওভার ব্রিজ অতিদ্রুত সময়ের ভিতরে বাস্তবায়ন করতে হবে নাহলে আমরা সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবো।
ইবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মু. মাহমুদুল হাসান বলেন, ছাত্রশিবির সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সচেতন। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু আমাদের প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত করেছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছি।
আশ্বাস পেলেও এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেই আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবো যেন তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়ক সংস্কারের জন্য তাগিদ দেয়। পাশাপাশি নিহত শিক্ষার্থীর ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হবে। এই দুর্ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক সংস্কারসহ সড়ক নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া না হয় আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, "আমি ঘটনাটি শোনার সাথে সাথেই হাসপাতালে এসেছি। ওর বিভাগের শিক্ষকরাও এখানে আছেন। এখন লাশ ধোায়নো হচ্ছে। এরপর ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ওর বাড়ি জয়পুরহাটে পাঠানো হবে।"
আ. দৈ./ কাশেম