প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক হয়। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বৈঠকে দু'দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। সেখানে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বিদ্যমান সহযোগিতা আরো জোরদার করতে গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে ওয়াশিংটন। ড. ইউনূস সরকার গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনা এবং আগামী নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে সমর্থন-সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স হ্যান্ডেলে ওই বৈঠকের ছবি প্রচার করে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে দেখা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।
সরকারি সূত্র বলছে, জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নির্ধারিত সভাস্থলে স্থানীয় সময় সকালে আধাঘণ্টাব্যাপী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে কোন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, সেই পরিস্থিতি আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত সহযোগিতা কামনা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান, সন্ত্রাস দমন, শ্রমবিষয়ক সংকট, পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইউনূস-ব্লিঙ্কেন বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন ড. ইউনূস ও ব্লিঙ্কেন। সেখানে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করতে সংস্কারের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, যেখানে অংশগ্রহণমূলক, গণতান্ত্রিক এবং বাংলাদেশিদের ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। ড. ইউনূস ও ব্লিঙ্কেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শ্রম অধিকারের প্রতি সম্মান, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার রক্ষা এবং রোহিঙ্গা ও সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ার গুরুত্বের বিষয়টি আলোচনা করেন।
কূটনৈতিক সূত্র মতে, রাষ্ট্র সংস্কারে একেবারে শূন্য থেকে যাত্রা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এই পরিস্থিতিতে তিনি শুধু চিরাচরিত কায়দায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফর করছেন না। বাংলাদেশের সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চান তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কিন্তু উষ্ণ সাক্ষাৎ ড. ইউনূসকে উদ্দীপ্ত করে তুলেছে। সংস্কারের উদ্যোগের প্রতি বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সহায়তার কথা বলেছে। এখন এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও জোরালোভাবে পাশে চান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ায় ড. ইউনূসের প্রশংসা করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় তার কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোয় তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় যেখানে যেখানে সুযোগ আছে, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সহযোগিতা করবে।
আ.দৈ/এআর