আর সরকারের প্রয়োজন হবে না, নিজেই শপথ পড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের চেয়ারে বসে যাবেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তার সমর্থিত ভোটারদেরকে সাথে নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। শুধু তাইনয়, টানা ৩ সপ্তাহ ধরে চলমান আন্দোলনে নগর ভবনে ৬৫টি তালা ঝুঁলিয়ে দিয়ে নাগরিকদের সব ধরনের সেবা বন্ধ রেখেছেন তিনি।
ডিএসসিসির কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহযোগিতায় ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে গত ১৪ মে থেকে চলছে এই অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি। ডিএসসিসির মেয়র পদে শপথের বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় ও নির্দেশনার পর নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন আইনের মারপ্যাচের গ্যারাকলে পড়েছেন। তবে এই আইনের মারপ্যাচের গ্যারাকল থেকে সহজে বের হবার কোন উপায় দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়েছে সরকার ও ইশরাক হোসেনের অসহযোগ আন্দোলন। যারফলে বাধ্য হয়ে চলমান আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করতে হচ্ছে তাকে। ঈঁদের পরে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আবার মাঠে নামার ঘোষণা রয়েছে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুর ৩টার দিকে নগর ভবনে আন্দোলনকারীদের সামনে এসে নিজেই ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ে চেয়ার দখলের ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। একই সাথে আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথের দাবিতে চলমান আন্দোলন আপাতত স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে নগরবাসীর সেবামূলক সব ধরনের কাজ বন্ধ রেখে জনগণের বারটা বাজিয়ে দিয়েছেন তিনি। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের ‘টপ টু বটম’ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নগরবাসীর সেবা না করলেও ঠিকই গত ‘মে. মাসের’ পুরো বেতন এবং আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বোনাস পাচ্ছেন।
সম্প্রতি নগরীতে অতি বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় জনগণের দুর্ভোগ, রাজস্ব আদায় বন্ধ, মশক নিধন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমসহ সব ধরনের নাগরিক সেবামূলক কাজ বন্ধ রয়েছে। এককালের জনপ্রিয় বিএনপি নেতা ও অভিবক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে হুট করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ টানা ৩ সপ্তাহ যাবৎ নাগরিকদের অসহনীয় দুর্ভোগ এবং সৃষ্ট পরিস্থিতির দায়ভার কে নেবে এমন প্রশ্ন উঠেছে সচেতন নাগরিকদের মাঝে।
এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘এই নগর ভবন বিগত ৩ সপ্তাহ আমাদেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল, আমরাই নিয়ন্ত্রণ রেখেছি, আমরাই দখলে রেখেছি। এই শপথ যদি না পড়ায়– আমি নিজেই গিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসতে পারি, ২ মিনিটও লাগবে না। তিনি বলেন, ঢাকাবাসী আমাকে বারবার অনুরোধ করেছেন, কেন আমি ঢাকাবাসীকে সাথে নিয়ে শহীন মিনারে গিয়ে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করছি না। তখন আমরা বলেছি, যেহেতু আমরা একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সেহেতু আমাদের দল থেকে বিশেষ করে সালাহউদ্দিন আহমেদসহ আমাদের আইনজীবীরা বারবার নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে আমাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেছেন। কারণ আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী, আমরা চাই না কোনো বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক।’
ইশরাক বলেন, ‘আপনারা যদি অবিলম্বে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা না করেন তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ভোটারদেরকে সাথে নিয়ে আমি নিজেই শপথ পড়ে আমি আমার চেয়ার দখল করবো এবং নগর ভবন কীভাবে চলবে সেটা ঢাকাবাসী নির্ধারণ করবে। কোনো বহিরাগত উপদেষ্টা, বহিরাগত কোনো প্রশাসককে এই নগর ভবন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের শেষ কথা, এটাই আমাদের শেষ বার্তা।’
তিনি বলেন, ‘আসন্ন কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় নিয়ে নগর ভবন অবরোধ ও ঘেরাও এর যে কর্মসূচি সেটাকে কিছুটা শিথিল এবং কিছুটা বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ছুটির পরে শপথের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে ঢাকাবাসীকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।’
ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত ১৪ মে থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়। ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, ইশরাকের সমর্থকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর আবার কর্মসূচি চলছে। টানা তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলনে নগর ভবনের সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন তারা। এদিকে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে করপোরেশনের কর্মকর্তারাও অঘোষিত ছুটিতে আছেন। ফটকগুলো তালাবদ্ধ থাকায় কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না। দাপ্তরিক কাজ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। শুধু পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কাজ চলছে।