বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে নতুন ৪ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন। কর্মসূচিতে রয়েছে,আগামী বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার গণস্বাক্ষর গ্রহণ; মে ও জুন মাসে দেশের প্রতিটি জেলার ডিসিকে স্মারকলিপি প্রদান; জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে প্রতিটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় খতমে নবুওয়ত সম্মেলন আয়োজন।
আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সম্মেলনে কয়েক লাখ মুসলমান অংগ্রহণ করেন।
সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী। খতমে নবুওয়ত পরিষদের আহ্বায়ক ও খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমির মাওলানা আবদুল হামিদের (পীর সাহেব, মধুপুর) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমানও বক্তব্য দেন।
আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, দারুল উলুম হাটহাজারীর অধ্যক্ষ মাওলানা খলিল আহমাদ কুরাইশী, আল হাইয়াতুল উলিয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (ভারত) সভাপতি মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের মহাসচিব মাওলানা হানিফ জালন্দরি, ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্টের ওয়ার্ল্ড নায়েবে আমির শায়খ আব্দুর রউফ মক্কি,পাকিস্তানের ইউসুফ বিন্নুরী টাউন মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম ড. আহমাদ ইউসুফ বিন্নুরী, পাকিস্তানের মাওলানা ইলিয়াছ গুম্মান, মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শায়খ মুসআব নাবীল ইবরাহিম।
বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধানের প্রস্তাবনায় এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং সবাই সহযোগিতা করেন, তাহলে খতমে নবুওয়ত কমিটির দাবির বিষয়ে বিএনপি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যারা রাসুলুল্লাহকে (সা.) স্বীকার করে না, তাদের বিএনপি মুসলিম হিসেবে মনে করে না।
জামায়াতে ইসলামীর রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে দেশে বা মুসলিম বিশ্বে কোথাও কোনো দ্বিমত নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, দেশ -বিদেশের লাখো আলেম উলামা, গবেষক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ সম্মেলনে সমকালীন ধর্মীয় পরিস্থিতি, কাদিয়ানীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা সরকারকে করতে হবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কার্যক্রম আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। “আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবসহ নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাদিয়ানীদের প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের অনেক সাধারণ মানুষ এসব কনটেন্ট দেখে প্রকৃত তথ্য যাচাই করতে পারে না। ফলে অনেকেই বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
এ এম এম বাহাউদ্দীন খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্বও তুলে ধরে বলেন, “এই আন্দোলন কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস রক্ষার বিষয় নয়; এটি সমাজকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করার সংগ্রাম। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এবং দৈনিক ইনকিলাব এই অবস্থানে অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।”
আজকের এ সম্মেলনে দেশের অন্যতম বড় দুই রাজনৈতিক দল—বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি ইসলামপন্থী দলগুলোর নেতাদেরও সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগে বিক্ষিপ্তভাবে হলেও এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন হচ্ছে। বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের আলেমরা এই মহাসম্মেলনে যোগ দেন।
আয়োজক কমিটি বলেছে, খতমে নবুওয়তের পবিত্র আকিদা রক্ষায় বৈশ্বিক ঐক্য গড়ার এ সম্মেলনে সারাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। তাদের প্রত্যাশা, লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আজ এক ঐতিহাসিক দৃশ্যে পরিণত হবে।