ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসা সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি পদত্যাগ করে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসেন। তথ্য উপদেষ্টা থাকার সময় নাহিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে কাজ করতেন আতিক মোর্শেদ। এখন সেই আতিক মোর্শেদকেই ঘিরে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগ।
শুক্রবার (৩০ মে) গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দাবি করেছেন, আতিক মোর্শেদ মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা লোপাটে জড়িত। শুধু তাই নয়, তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে নগদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের স্ত্রী ও আত্মীয়দের নিয়োগ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন রাশেদ খান।
রাশেদ খানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগদের ডেপুটি সিইও মুয়ীজ নাসনিম ত্বকির সঙ্গে মিলে এই অর্থ আত্মসাতের কাজ করেছেন আতিক মোর্শেদ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের বরাতে রাশেদ বলেন, এই দুইজন নগদের বড় ধরনের লুটপাটে সরাসরি যুক্ত। এমনকি নগদ ভবনের ৬ তলায় একই অফিস কক্ষে নিয়মিত বসে কাজ করছেন আতিক, অথচ তিনি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা নন।
এখানেই শেষ নয়। আতিক মোর্শেদের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজার, কমপ্লায়েন্স পদে বসিয়েছেন। আরও অনেক নিকট আত্মীয়কে নগদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
রাশেদ খানের পোস্ট অনুযায়ী, নগদের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত ডেপুটি সিইও মুয়ীজ নাসনিম ত্বকিকে ১৮ মে রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরদিন বিকেলেই তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাশেদের দাবি, আতিক মোর্শেদের প্রভাবেই ডিবি পুলিশ তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এখানেই প্রশ্ন উঠছে— কে আতিক মোর্শেদকে এই প্রভাবের জোর দিয়েছে? কে তাকে নগদের ভিতরে এই নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দিয়েছে?
সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে ঘিরেও এই ঘটনায় সন্দেহ তৈরি হয়েছে। রাশেদ খান বলেন, “আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নাহিদ ইসলাম তার দায়িত্ব পালনকালে কোনো তদন্ত করেননি বা কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাহলে কি তিনি এসব বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন? না কি সবকিছুই তার পরামর্শে হয়েছে?”
তিনি আরও বলেন, “নাহিদ ভাইয়ের একটা কথা আমার প্রায় কানে বাজে— 'আমাদের ডোনেট করছে ধনীরা’। প্রশ্ন হলো, সেই ধনীরা কারা? কী বিনিময়ে দিচ্ছে এসব দান? জনগণ কি জানে তাদের অর্থ কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে?”
রাশেদ খান স্পষ্টভাবে বলেন, “আতিক মোর্শেদ যে কাজগুলো করেছে, সেগুলোর দায় নাহিদ ইসলাম তদন্ত ছাড়া এড়াতে পারেন না। তার উচিত হবে অবিলম্বে আতিক মোর্শেদকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের সুযোগ করে দেওয়া।”
এদিকে নগদের লুটপাট ও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সমালোচনা চলছে। সমালোচনার মুখে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে শুক্রবার ফেইসবুকে পরপর দুটি পোস্ট দিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এছাড়াও গণমাধ্যমের কাছে দেড়শ কোটি টাকা লুটপাটের হিসাবও চেয়েছেন।
ফেইসবুকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন আতিক মোর্শেদও, যেখানে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।