রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫,
১ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
জাতীয়
সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে
সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গে দ্রুত বরখাস্তের বিধান সংশোধন হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Tuesday, 20 May, 2025, 4:33 PM  (ভিজিট : 177)

এবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ সরকারি কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে, দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত বরখাস্ত করাসহ শাস্তিমূলক আইনী বিধান আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে, বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

 মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, সংশোধিত আইনের খসড়া ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে চলা শাস্তিমূলক মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে এ সংশোধন আনা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়,  সংশোধিত আইন ও বিধানে সরকারি চাকরিজীবীদেরকে দ্রুত সুশৃঙ্খলায় আনার পাশাপাশি অপরাধীদেও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কাঠামো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই আইন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা রোধ করবে; একইসঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের সেবা প্রদানে মনোযোগী রাখতে সহায়তা করবে। 

সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে জনপ্রশাসনের একাংশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, একদল কর্মকর্তা দলবদ্ধভাবে জনপ্রশাসন সচিবকে অবরুদ্ধ করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি আদায় করেছেন। প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ কর্মবিরতিতে গেছেন, কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। 

এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মনে করছে, সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এবং আন্দোলন, সভা-সমাবেশ ও কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিকে নিরুৎসাহিত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ প্রয়োজন রয়েছে। ফলে নতুন সংশোধিত আইনে সরকার সভা-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও ধর্মঘটসহ যে কোনো ধরনের দলবদ্ধ কর্মসূচিকে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এসব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর :
বর্তমান প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, তদন্ত কমিটি গঠন, প্রতিবেদন দাখিল এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ প্রশাসনিক ধাপে যেতে হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আপিল করার অধিকারও রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে নতুন আইনে এসব বাদ দিয়ে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান রাখা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়সীমা নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারি দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে। এরপর অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ ২০–২৫ কার্যদিবস সময় লাগবে। 

কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে জবাবদানের সময়সীমা শেষ হওয়ার দিন থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন। নতুন আইন অনুযায়ী, দাবি আদায়ে দলবদ্ধ কর্মসূচি, বলপ্রয়োগ, সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি—সবকিছুই শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে। কেউ এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে অন্যকে প্ররোচিত করলেও একই শাস্তির আওতায় পড়বেন। কর্মস্থলে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিধান রাখা হয়েছে। তবে আইনের এই খসড়া নিয়ে সরকার জনমত নেয়নি। সচরাচর আইন প্রণয়নের আগে মতামত আহ্বান করা হলেও এবার গোপনীয়ভাবে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সমালোচনার মুখে উপদেষ্টা নিয়োগ চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বেশ সমালোচনা হয়। আইনের খসড়া পাশের জন্য এর আগে একবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঠানো হয়েছিল। তখন উপদেষ্টা পরিষদ সেটি অনুমোদন না দিয়ে আরও পর্যালোচনার নির্দেশনা দেয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 জানা যায়, গত ১৬ মে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ণ উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ ও জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। ওই সভায় উপদেষ্টারা খসড়ায় প্রস্তাবিত সংশোধন সম্পর্কে মত দেন এবং পরে লিখিতভাবে মতামত দেন।তাদের মতামতের আলোকে আইনটির খসড়া পুনরায় সংশোধন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখন এটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

জিয়াউর রহমান সরকারের আমলের  ১৯৭৯ সালের অধ্যাদেশ :
জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে জারি হওয়া ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’-এ চার ধরনের অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তির বিধান ছিল। অপরাধগুলো ছিল,শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অযৌক্তিক অনুপস্থিতি, অন্যদের কাজে বাধা দেওয়া এবং প্ররোচিত করা। আর শাস্তি ছিল—বরখাস্ত, অব্যাহতি ও পদাবনতি বা বেতন হ্রাস। পরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় অধ্যাদেশটি রহিত হয়ে যায়। ২০১৮ সালে প্রণীত ‘সরকারি চাকরি আইন’-এর মাধ্যমে সেই অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়। 

তবে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৯৭৯ সালের অধ্যাদেশটি পুনর্বহালের সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। গত মার্চে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে বলে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা বেড়েছে। অনেকে আইনানুগ নির্দেশ পালনেও অনীহা প্রকাশ করছেন। এতে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে এবং সরকারি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে উপদেষ্টা পরিষদ ১৯৭৯ সালের পুরনো অধ্যাদেশ ফেরানোর বিপক্ষে। তারা বলছেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের আইনের সংশোধনের মাধ্যমেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।

আ. দৈ. /কাশেম

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জরুরি বৈঠকে বসছে সোমবার
জাতীয নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের তারিখ নির্ধারণ সিইসি
সাতক্ষীরায় সাবেক এমপি রিফাতের বাড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযান,
২৪০০ আসনের বিপরীতে আবেদন ৬০ হাজারেরও বেশি
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
‘আমার বুড়ো বাপকেও তুই ছাড়িসনি’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গণধোলাই
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
জাতীয়- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝