সম্প্রতি একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পরিচিত চঞ্চল চৌধুরীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ওঠে। অবশেষে এ বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
আজ সোমবার নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে ইশরাক হোসেন এ বিষয়ে লেখেন, ‘শুক্রবার ১৬ মে একটি স্বনামধন্য প্রথম সারির স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে প্রধান অতিথি হিসাবে অ্যাওয়ার্ড সেরেমনি অনুষ্ঠানে কিছু সময়ের জন্যে যোগ দেই। সেই অনুষ্ঠানে কারা উপস্থিত থাকবেন, আমার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করতে হবে এই বিষয়গুলো কিছুই জানা ছিল না। অনুষ্ঠানটিতে একজন অতি বিতর্কিত ব্যক্তির সাথে ছবি ওঠে যাকে আমি আগে চিনতাম না এবং তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম না। ’
তিনি লেখেন, ‘২০১৫ সালে দেশের বাইরে অবস্থান করায় তখনকার অনেক সেনসিটিভ ঘটনা আমার চোখে এড়িয়ে যায়। এটা আমার সীমাবদ্ধতা, আমার জানা উচিত ছিল। এই ছবিটি দেখার পর আমার অনেক প্রাণপ্রিয় ভাই ও সহযোদ্ধাদের মনে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। আমি সেটার জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হওয়ার কথা দিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, চঞ্চলের হাতে ইশরাকের পুরস্কার তুলে দেওয়া নিয়ে গতকাল রবিবার নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। তিনি এ ঘটনার সমালোচনা করে হতাশাও ব্যক্ত করেন। তুলে ধরেন চঞ্চলের বিএনপিবিরোধী অবস্থান।
মারুফ কামাল খান তার পোস্টে লেখেন, ‘এই ছবিখানা দেখিয়া মনটা বড়ই বিগড়াইয়া গেল। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করতাম তখন। তিনি এবং আরো অনেকের সঙ্গে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন অফিসে আমিও আটকা পড়েছিলাম। শেখ হাসিনার অনুগত পুলিস বাইরে থেকে তালা মেরে আমাদেরকে তিন মাস অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। নন্দিত নেত্রী ম্যাডাম জিয়ার ওপর পুলিশ পিপার স্প্রে ছুঁড়েছিল। আমাদের অনেকের গায়ে ও চোখে মুখে সে স্প্রে লেগেছিল। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফোন, ইন্টারনেট, গ্যাস, পানি এবং অবশেষে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন বাইরে থেকে খাবারও ঢুকতে দেওয়া হোতো না। চিড়া-মুড়ি ও অন্যান্য শুকনা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচাতে হয়েছে।’
তিনি লেখেন, ‘ভয়ংকর আতঙ্কের সে ছিল এক বীভৎস সময়। সে সময়েই আমি নিজে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমাদেরকে আটকে রেখে আসামি করা হয় নরহত্যা, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, হামলার অসংখ্য মামলায়। প্রতিনিয়ত ছিল পুলিশ ও গুন্ডাদের ভেতরে ঢুকে হামলা চালাবার আস্ফালন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা এসে রোজ ঘেরাওয়ের মহড়া চালাত। নানা হুমকি দিত। এই চঞ্চল চৌধুরীসহ লীগের কিছু নট-নটীও এসেছিল আমাদেরকে ঘেরাও করতে। ’
মারুফ কামাল খান লেখেন, ‘ওরা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছে, তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ থেকে আমরা নাকি অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছি! ওরা দাবি করেছে আমাদের কঠিন সাজা দিতে হবে। এগুলো কি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছিল? এখন সংস্কৃতির নামে ওদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে দেখলে খুব কষ্ট হয়, ভারি কষ্ট! এ কষ্টের কথা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।’