জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরিতে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘সর্বসম্মত একটি জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করা হবে।’
রোববার (১৮ মে) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বর্ধিত বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। বৈঠকটি ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনা, যা আগের বৈঠকে অসমাপ্ত থাকা কিছু বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘এই যে আমরা বসতে পারছি, তা বহু রক্ত ও ত্যাগের ফল। যারা তাদের জীবন দিয়ে গণতান্ত্রিক আলোচনা ও সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করেছেন, তাদের প্রতি আমাদের দায় আছে। এ দায় কেবল আমাদের নয়, বরং সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং সামাজিক শক্তিগুলোর সম্মিলিত দায়।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে যে বিষয়গুলোতে মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো নিয়েও দ্বিতীয় পর্যায়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন—বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সফর রাজ হোসেন, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক আমলা মো. আইয়ুব মিয়া এবং কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আলোচনা টিমের নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, এহসান মাহবুব যোবায়ের, শিশির মোহাম্মদ মনির, সাইফুল আলম খান মিলন, মতিউর রহমান আকন্দ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং সরকার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২০ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের প্রস্তাবনা জমা দেয় জামায়াতে ইসলামী। এরপর ২৬ এপ্রিল উভয় পক্ষের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেটিতে বেশ কিছু বিষয়ের আলোচনা অসমাপ্ত থেকে যায়। আজকের বৈঠকে সেসব বিষয় পুনরায় আলোচনায় আনা হয় এবং যৌথভাবে সমাধানের পথ খোঁজা হয়।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে একটি ন্যায্য, গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি করতে চায়, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংস্কার ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি হতে পারে। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সর্বজনীন কাঠামোতে পৌঁছানোই এখন কমিশনের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।