রাজধানী ঢাকায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় ক্রমেই বাড়ছে বড় বড় ভবনগুলোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডসহ নানা ধরনের দূর্ঘটনা। অবশেষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঝুকিঁপূর্ণ বাণিজ্যিক ও আবাসিক বড় বড় ভবনগুলোতে অগ্নিকান্ডসহ নানা দূর্ঘটনা কমাতে সরাসরি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে নগরীতে উন্নয়ন ও সেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে বহতল ভবনে অননুমোদিত রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন করেন। উক্ত পরিদর্শনে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি সহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরিচালত এসকল রেস্টুরেন্টে অগ্নিকান্ড সহ যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহ পরিদর্শন করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলক্ষ্যে সকল সংস্থা একযোগে কাজ করবে। ব্যত্যয়কৃত ভবনসমূহের বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন,‘শুধু এই ভবনটিই নয়, সাতমসজিদ রোড সহ ঢাকার অন্যান্য স্থানের এরূপ নকশা বহির্ভূত ও অননুমোদিত রেস্টুরেন্ট এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনসমূহের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে রাজউক। একটি বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার জন্য ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে সকল সংস্থাকে নিয়ে কাজ করবে রাজউক।’
এরপর ভবনটির মালিকপক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে নকশার ব্যত্যয়কৃত অংশের সমাধান করতে বলা হয় অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে রাজউক চেয়ারম্যান জানান। এসময় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহ রাজউক এর নকশা মেনে ভবন নির্মাণ না হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজে সহযোগিতা করবে বলে জানায়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ প্রশাসনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে রাজউককে অবহিত করে।
গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজউক এর সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) শেখ মতিয়ার রহমান, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মোহাঃ হারুন-অর-রশীদ, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রধান নগর স্থপতি সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা বৃন্দ ও সহযোগী সংস্থাগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ।
রাজউক কর্মকর্তারা জানান, অগ্নি ও ভূমিকম্প সহ ভবন সম্পর্কিত অন্যান্য ঝুঁকি হ্রাসে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাস্টিজ আমিন আহমেদ ট্রাস্ট ভবন, প্লট-৫৪, রোড- ১০/এ, সাত মসজিদ রোড, ঢাকায় দুইটি বেজমেন্ট সহ ১৩ তলা ভবনটি রাজউকের নেতৃত্বে আন্তঃসংস্থার প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করেন। এসময় ২ টি বেজমেন্ট সহ ১৩ তলা ভবনটির প্রায় প্রতিটি তালায় এক বা একাধিক রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ভবনটিতে ফায়ার সিঁড়িতে যাবার সিম্বলিক চিহ্ন, অগ্নি নিরোধক দরজা ইত্যাদির কোন ব্যবস্তা রাখা হয়নি।
এছাড়াও ভবনটির বিভিন্ন তলাতে অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হবার কথা থাকলেও অধিকাংশ তলাতে রেস্টুরেন্ট পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত ভবনটির রাজউকের অনুমোদিত লেআউট নকশায় ১৩ তলা উল্লিখিত থাকলেও সরেজমিনে ১৪তলা আংশিক নির্মিত পাওয়া যায়। ফরেস্ট লাউঞ্জ নামক একটি রেস্টুরেন্টকে ১৩তলার উপর উলম্ব ভাবে ০১টি তলা বৃদ্ধি করে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতে দেখা যায় ।
রাজউক কর্মকর্তারা আরো জানান, এসময় রাজউক চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ প্রতিটি রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখেন। বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না। কিছু রেস্টুরেন্টে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ নেই বলে জানা যায়। সম্পূর্ণ ভবনে রাজউক প্রদত্ত নকশা অনুযায়ী দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে জরুরী বহির্গমনের জন্য ফায়ার এক্সিট পাওয়া যায়নি। জরুরী বহির্গমনের সিড়ি ও নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য নকশা অনুযায়ী রাখা করিডর বন্ধ করে সেখানে স্টোর রুমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ভবনটিতে একটি জরুরী বহির্গমনের পথ কলাপসিবল গেট দিয়ে বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়াও রেস্টুরেন্ট গুলোর ভিতরে কিচেনে অপর্যাপ্ত জায়গা থাকায় তা দুর্যোগকালে ব্যবহার অনুপযোগী বলে প্রতীয়মাণ হয়। এসময় নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অননুমোদিতভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনার ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ভবন মালিক পক্ষের প্রতিনিধিগণ।
পরিদর্শনকালে রাজউক চেয়ারম্যান রেস্টুরেন্ট সমূহে আগত শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য অতিথিদের সাথে কথা বলেন এবং এ ধরনের ভবনে আসার পূর্বে ঝুঁকি বিবেচনা করার এবং সচেতন হওয়ার আহবান জানান। পরিদর্শন শেষে ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, রাজউক সংশ্লিষ্ট ইমারতের প্রতিনিধিগণকে ইমারতের ফায়ার সেফটি সম্পর্কিত ত্রুটি বিচ্যুতির বিষয়ে মৌখিকভাবে তাৎক্ষণিক অবহিতকরণসহ অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এছাড়াও চেয়ারম্যান, রাজউক ভবনটিতে বিদ্যমান রেস্টুরেন্টগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্তের নিমিত্তে রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাথে একটি মতবিনিময় সভা করবেন মর্মে জানান। পরবর্তীতে জনাব শীলাব্রত কর্মকার, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজউক এর উপস্থিতিতে ভবন মালিকের পক্ষে জনাব সৈয়দ শামীম রেজা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইম্পেরিয়াল কনসালটেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, জাস্টিস আমিন আহাম্মেদ ট্রাস্ট সেন্টার আলোচ্য ইমারতে বিদ্যমান বিচ্যুতি/ ব্যত্যয়সমূহ আগামী ১৫ কার্যদিবস এর মধ্যে সম্পন্ন করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন।
আ. দৈ./ কাশেম