Publish: Tuesday, 6 May, 2025, 7:20 PM (ভিজিট : 100)
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, নগরীর প্রতিটি ভবন নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব এবং দুর্যোগ সহনশীল করতে রাজউককে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ভবনের নির্মাণ পর্যায়ে তদারকি ও গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য দক্ষ ও আধুনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তদারকি ও গুণগত মান যাচাইয়ের অভাবে বড় বড় ভবনে অগ্নিকাণ্ড ও বিপর্যয় ঘটছে। তিনি এসব বিষয়ে ভবনের মালিক, প্রকৌশলী, স্থপতি ও ঠিকাদার সবার সচেতন হবার আহবান জানান।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকায় হোটেল প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে রাজউক ও জাইকার যৌথ আয়োজনে ‘ভবন সংক্রান্ত দুর্যোগের (ভূমিকম্প ও অগ্নি) ঝুঁকি প্রশমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি’ বিষয়ে দিনব্যাপী আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সেমিনারে রাজউক ও ওঊই এর মাঝে উঈছজ প্রকল্প বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, শুধু আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে না। এর বাহিরেও যেন প্রকৌশলী দের দক্ষতা বাড়ে সে লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে জাইকা সহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে আমরা একযোগে কাজ করছি। আমরা চাই ভবিষ্যতের শহর হবে নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব ও দুর্যোগ সহনশীল এবং তা নিশ্চিতকরণে সরকারি ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” এই সেমিনারে রাজউক ও জাইকা আয়োজিত আজকের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে শক্তিশালী কর্মপন্থা নির্ধারণ করা যাবে। যা ভবিষ্যতে আমাদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্টেকহোল্ডাররা আইন না মানলে, কঠিন আইন করলেও নিরাপদ নগর নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। আমাদের সমাজে আইন না মানার সংস্কৃতি রয়েছে। প্রভাবশালীদের মধ্যে এই প্রবণতার হার বেশি। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রাজউকের কর্মকর্তারা অসহায়। অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে আইন অমান্য করা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতিনিধিরাও অনেক সময় সঠিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে যায়। জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর কর্মপরিবেশ পেয়েছি। এই পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা একটি পরিবর্তন আনতে চাই তাহলে আমাদের নিজেদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “একটা ভুল ধারনা আছে যে ড্যাপ পরিবর্তন না করার কারণে নির্মাণ কাজ থেমে আছে, বাস্তবে তা নয়। আমরা রাজউক থেকে প্রতিনিয়ত নিয়ম মেনে নির্মাণ অনুমোদন দিচ্ছি। নকশা অনুযায়ী সরেজমিনে যতটুকু রাস্তা আছে তা মেনেই আমরা নির্মাণ অনুমোদন দিব এর বাহিরে না। সামান্য লাভের আশায় আইন ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণ করলে পরিশেষে আপনাদেরকেই তার ফল ভোগ করতে হবে। কেননা রাস্তার জায়গা ছেড়ে বাড়ি না করলে ফায়ার সার্ভিস ঢুকতে পারবে না। বড় দূর্ঘটনার শিকার হতে হবে সাধারণ মানুষকে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি।” তিনি বলেন,নকশাবহির্ভূত ভবনে রাজউকের অভিযান চলমান আছে। এসব অভিযানকে সাধারণ জনগণ স্বাগত জানাচ্ছে ও তাদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) ও প্রকল্প পরিচালক মোহাঃ হারুন-অর-রশীদ বলেন, “গত কয়েক বছরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যাতে হতাহতের সংখ্যা অনেক। এর ঝুঁকি কমাতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাসস্থান রেখে যেতে আমাদের আইন মেনে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করতে হবে। রাজউক থেকে ভূমিকম্প ও ঝুঁকি প্রশমনে সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আরও ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।”
সেমিনারে জাইকার বাংলাদেশ প্রধান ইচিগুচি তামোহিদোর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে বক্তব্য রাখেন জনাব মিউরা মারি।
আজকের অনুষ্ঠানে ‘ডিসিকিউআর’ উঈছজ প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মনিরুল হক। এছাড়াও ভূমিকম্প ও অগ্নি ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাকিব আহসান। এসময় প্রকল্পের রূপরেখা উপস্থাপন করেন জাইকার প্রতিনিধি জনাব কবুতা।
অংশগ্রহণমূলক কর্মশালার মধ্যে দিয়ে সকল অংশীজনদের সাথে নিয়ে একটি সফল সেমিনার আয়োজনে আয়োজকগণ সহ উপস্থিত সকলেই সন্তুষ্ট এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করার লক্ষ্যে একমত হোন। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রাজউক এর কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।