চারদিনের সফর শেষে ঢাকা ঢাকা ছেড়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। সফরে তিসি ঢাকা চট্টগ্রামের ব্যস্ত সময় কাটান। তার এই সফরে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যুটি। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর জোর আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের শিবিরে মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই দিনে কক্সবাজারের এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন আগামী ঈদ ও রোজা রোহিঙ্গারা যেন নিজ ভুমিতে পালন করতে পারে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার বক্তব্যের পর থেকে একই বিষয় সামন্যে এসেছে রোহিঙ্গ সমস্যা সমাধান এক বছরের মধ্যে হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ কি ধরনে পদক্ষে নিচ্ছে সে বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা এসেছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার আর্মির ব্যাপক দমনাপীড়নে আকার থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তচ্যূত হয়ে বাংলাদেশে টেকনাফে অবস্থান করছে। প্রায় ৮ বছর ধরে রোহিঙ্গা শিবিরে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রোহিঙ্গদের ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের ব্যয় মেটাতেও বাজেটে সরকারের বড় ধরনের বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। ইতমধ্যে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থগুলো রোহিঙ্গাদের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। এটা নিয়ে খোদ জাতিসংঘ মহাসচিবও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে সব মিলিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের চার দিনের সফরে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় ছিল রোঙ্গি ইস্যুটি। বিশ্লেষকদের মতে জাতিহসংঘ মহাসচিব খোদ রোহিঙ্গ শিবির পরিদশর্ন এবং ইফতার করার কারণে ইস্যুটি ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিভাবে প্রচারিত হয়েছে। ফলে ফের ইস্যুটি এখন আলোচনার জন্য সামন্যে এসেছে। নতুন করে সুযোগ এসেছে বিষয়টি সমাধানের। এখই সময় বিষয় সমাধানের দিকে নজর দেয়া।
তবে প্রশ্ন দেয়া দিয়েছে রোহিঙ্গ সমস্যাটিকে সজহেই সমাধান করা সম্ভব? এর মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনের করিডোর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অনেকেই আশা করছেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চ্যালেন তৈরি প্রস্তাব ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি সহজ হতে পারে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনি গুতেরেস একই সুরে কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়টি। তবে কি নতুন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে? প্রধান উপদেষ্টা হঠাৎ করে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ধরেই কেন এমন বক্তব্য দিলেন?-এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের মনে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন ‘‘জাতিসংঘ থেকে আবারও যে প্রতিশ্রুতি এসেছে এবং মিয়ানমারের বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের সুযোগ এসেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এই প্রেক্ষিতে আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা উৎসাহমূলক সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন।’
তবে পরিস্থিতি যাই হোকনা কেন এক সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাক্যাম্প পরিদর্শ রোহিঙ্গাদের মনে কিছুটা হলে আশার সঞ্চয় ঘচেছে। তারা মনে করছেন এতদিন হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আবু মুসা বলেন, ‘‘প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। আমরা আশা করছি, উনি যখন একটা ডেটলাইন দিয়েছেন, ফলে এই সময়ে মধ্যে একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে।’’ আগামী সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ার কথাও জানানলেন তিনি। বলেন, ‘‘সেখানেও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ দেবে বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর নিয়ে আলোচনা
এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন গুতেরেস। রোহিঙ্গা ইস্যুতে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যেটা এখন খুবই প্রয়োজন তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের সব প্রতিবেশীকে কাজে লাগিয়ে সেখানে সহিংসতা বন্ধে চাপ সৃষ্টি করা। একইসঙ্গে সংলাপের একটি কর্মপন্থা তৈরি করা, যা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সমাধান আনবে। আর এটা স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহায়তা করবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘একইসঙ্গে মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে যাতে তাদের প্রত্যাবাসন সফল করা যায়। একারণে আমাদের আলোচনাগুলো মধ্যে একটি ছিল যদি পরিস্থিতি সুযোগ দেয় তাহলে মানবিক সহায়তা বাংলাদেশ থেকে পাঠানোর চ্যানেল তৈরি করা। তবে এটা একটা বিষয়, যা করতে সম্পৃক্তদের অনুমোদন এবং সহায়তা লাগবে।’’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরো বলেন, ‘‘এ বছর আমি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’’ এছাড়াও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে বাংলাদেশ। এই সন্ধিক্ষণে শান্তি, সংলাপ ও ঐকমত্যে সহায়তা দিতে জাতিসংঘ তৈরি আছে বলেও জানান তিনি।